ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কখনও ভাবিনি আমার সরকারি চাকরি হবে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
কখনও ভাবিনি আমার সরকারি চাকরি হবে

বাগেরহাট: ‘রাজমিস্ত্রির কাজ করে চারজনের সংসার ও আমাদের দুই বোনের লেখাপড়া চালাতেই বাবার কষ্ট হয়। চাকরির জন্য টাকা দেওয়ার সুযোগ কোথায় আমাদের? আর সুপারিশ করার লোকও তো নেই আমাদের।

এছাড়া ছোট বেলা থেকে শুনেছি, ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া সরকারি চাকরি হয় না। তাই কখনও ভাবিনি আমার সরকারি চাকরি হবে। তবে আজ আমার সব ধারণা পাল্টে গেছে। ’
 
কথাগুলো বলছিলেন মেহেরুন নেছা মেরি। তিনি এবার বাগেরহাট পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন।  

শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ সব প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৪১ জনের নাম প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক। এসময় নিয়োগপ্রাপ্তরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। শুকরিয়া জানান আল্লাহর কাছে।  

নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মেধা ও শারীরিক পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা।  

বাগেরহাট সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি মো. আজগর আলীর মেয়ে মেহেরুন নেছা মেরী সরকারি পিসি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। স্বপ্ন পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়া। কিন্তু রাজমিস্ত্রি বাবার কষ্ট কিছুটা কমাতে অংশ নিয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ হাজার ৪০৪ জন নিয়োগ প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন মেরি।  

তিনি বলেন, কষ্ট করে লেখাপড়া করলে আল্লাহ যে ভালো সুযোগ করে দেন, এর প্রমাণ আমি পেয়েছি। আমি বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, অভাবের তাড়নায় ঠিকমত কলেজে যেতে পারি না। নিজের লেখাপড়া ও সংসারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকে ইট ভাটায় কাজ করি। রাত জেগে পড়ার ফলাফল হিসেবে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট (জিপিএ ৪.৯০) হয়। কলেজে ভর্তির পরেও ইট ভাটায় কাজ বন্ধ হয়নি আমার। কোনোদিন ভাবিনি যে আমার সরকারি চাকরি হবে। সখের বশে অনলাইনে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ফরম পূরণ করি। সব পরীক্ষা শেষে আজ আমি প্রাথমিকভাবে পুলিশ কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়েছি। কি যে ভালো লাগছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।  

শুধু অহিদুল ও মেরি নয়, পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত ৪১ জনের মধ্যে বেশিরভাগের গল্প একই রকম।  

কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া কচুয়া উপজেলার মসনি এলাকার অসুস্থ চায়ের দোকানি আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে আারিফ শেখ বলেন, বাড়ির সামনে চা বিক্রি এবং আমার প্রাইভেট টিউশনির টাকায় আমাদের সংসার চলে। কোনো প্রকার লেনদেন ছাড়া এ চাকরি হওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। আল্লাহর রহমতে বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে এখন আর তেমন কষ্ট হবে না।

বাগেরহাট পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি মেধাবীদের পুলিশ সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিতে। ভবিষ্যতেও সব নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৩৫ জন তরুণ ও ৬ জন তরুণীসহ মোট ৪১ জনকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থীদের শারীরিক উচ্চতা, কাগজপত্রাদি যাচাই-বাচাই এবং প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ মার্চ প্রাথমিক এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২৯ মার্চ মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।