ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছেড়ে দিলেন বিসিএস ক্যাডার মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২২
সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছেড়ে দিলেন বিসিএস ক্যাডার মা

ময়মনসিংহ: চাকরির কারণে সন্তানদের সময় দিতে পরছিলেন না মা জান্নাত-ই-হুর সেতু। তাই জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তিনি।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন মা জান্নাত-ই-হুর সেতু।  
 
তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা। শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সেতু। ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস সম্পন্ন করে একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। পরে সে বছরই সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন সেতু। বর্তমানে স্বামী রাসেলও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।  

জান্নাত-ই-হুর সেতু বলেন, আমাদের বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। মেজ মেয়ে ৫ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ১৮ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর আমার শাশুড়ি মা লালন-পালন করতেন। এখন আরও দুজন বাচ্চা ছোট হওয়ায় বৃদ্ধা শাশুড়ি মা একা পেরে ওঠেন না। এদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকরি করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করতে হয়।

ফলে আমার সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আর এ কারণেই নানা দিক চিন্তা করেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তাছাড়া কর্মস্থলে পর্দার খেলাপ হয় বলেও দাবি করেন তিনি। এ সময় পর্দা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পর্দা করে চাকরি করা যাবে বিষয়টা এমন না। আমি যে চাকরিটা করি সেখানে শুধু মহিলারাই কাজ করেন না। সেখানে পুরুষরা চাকরি করেন। তাছাড়া কৃষকের কাছে মাঠে গিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় পর্দার খেলাপ হয়।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন এই নারী কর্মকর্তা। ফলে সন্তানদের জন্য মায়ের এমন ত্যাগ স্বীকারের এই দিনটিতে ফুলেল শুভেচ্ছা বরণ করে নিয়েছে তার পরিবার। এ সময় ফুল দিয়ে সাজানো হয় ঘর। সেই সঙ্গে কেক কেটে এই দিনটিকে বরণ করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।  

এ বিষয়ে সেতুর স্বামী সানোয়ার রাসেল বলেন, সব সন্তানই চায় বাবা-মা বেশি সময় ধরে তাদের কাছাকাছি থাকুক। বিশেষ করে মায়ের সান্নিধ্য তারা বেশি চায়। কিন্তু আমরা যখন সারাদিন কাজ শেষে দুজন বাসায় ফিরতাম তখন সন্তানদের দেখে মন খারাপ হতো। আর এ কারণেই সেতুর ইচ্ছাতেই এই সিদ্ধান্ত। স্বামী হিসেবে আমি আমার স্ত্রীর চিন্তা ও দর্শনকে সম্মান জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।