ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

নজর খালি হাওরে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ফসলি জমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২২
নজর খালি হাওরে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ফসলি জমি

সুনামগঞ্জ: ভারতের মেঘালয়ে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাগুয়ার হাওরের নজর খালি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।

শনিবার (২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করতে দেখা যায়।

পাউবোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাঁধটি ফসল রক্ষার বাঁধ নয়। এটি বিশেষ বরাদ্দের বাঁধ কারণ এটি গ্রামবাসীর অনুরোধে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রকল্পের বাইরের কিছু জায়গা থাকে নিচু বা ভাঙা সেই জায়গাগুলো যেভাবে মেরামত করতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়, এটাও মিটিং আলোচনা করে দেয়া হয়েছে। আর এটা তো টাগুয়ার হাওরে। টাগুয়ার হাওর রামসার সাইট এখানে ফসল লাগানোর কথা না। এটা তেমন কিছু না। পানি উপচে বাঁধের ওপর দিয়ে গেছে তাই বাঁধ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেশিকিছু না।  

জানা যায়, এই বাঁধ নিমার্ণে পাউবো ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তাই জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে ফসল রক্ষা বাঁধ হোক বা পানি আটকানোর জন্যই দেয়া হোক, এতো টাকা ব্যয় করার পর কেন বাঁধ ভেঙে যায়? ফসল রক্ষার বাঁধ না হলেও এটি তো নিশ্চয়ই উপকারের জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার ফলে অন্য হাওরের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অজানা আতঙ্ক। এই হাওরে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে তাহিরপুর অংশে ২৫ হেক্টর জমি পড়েছে। বাঁধটি মেরামতের জন্য বর্ধিত করে করে ২৪ নম্বর পিআইসির অধীনে দেয়া হয়েছিল। পিআইসির সভাপতি সেন্টু এইটির কাজ বাস্তবায়ন করেন। বর্তমানে এই বাঁধটি আর মেরামতের কোনো সুযোগ নেই। ফলে নদীর পানি যতো বৃদ্ধি বাড়বে হাওরের ধান রক্ষা করা ততোটাই কঠিন হয়ে পড়বে। এই বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের গইনা কড়ি হাওর, এরাইল্লার হাওর, সন্নাসি হাওর, প্লইল্লার বিল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। নজর খালি বাঁধের কাজ খুবই নিম্নমানের হয়েছে বলে জানা গেছে।  

১ নম্বর উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কৃষক সাজিনুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধের কাজে অনেক গাফলতি রয়েছে। এ নিয়ে আমি অনেকবার কথা বলেছি যাতে বাঁধটি শক্তিশালী করে নির্মাণ করা হয়। বাঁধ ভাঙার পর কৃষকদের মাথায় দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ে গেছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম এবার যদি গোলায় ধান না ওঠে অনেক কৃষক মারা যাওয়ার অবস্থা হবে। অনেক ঋণ করে জমি আবাদ করেছেন।  

এ বছর বাঁধের কাজ ভাল হয়নি বলে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন নামের সংগঠন। বিগত ২০১৭ সালে হাওরে একের এক বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার সময় সংগঠনটি গড়ে ওঠে।  

আইনজীবী হুমাইনু কবির তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘টাগুয়ার হাওরে নজরখালি ক্লোজার দিয়ে পানি ঢুকতেছে। ৮২ গ্রামের কৃষক পরিবারের স্বপ্নের সলিল সমাধি। ’ 

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালেহীন শুভ বলেন, বাঁধ তদারকির কাজ উপজেলা প্রশাসন পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু তারা এ কাজে বার্থ্য হয়ে নজর খালি বাঁধ ভাঙার ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাঁধের কাজ খুবই নিম্নমানের হয়েছে তাই এটি ভেঙেছে।  আমরা এ খুব শিগগিরই আন্দোলনে যাবো।  

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বাংলানিউজকে বলেন, হাওরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে, আমরা আগে থেকেই সর্তক করে দিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনেনি, আমরা এখন তীব্র আন্দোলন শুরু করবো।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবির বাংলানিউজকে জানান, এটি মূলত ফসল রক্ষার বাঁধ নয়। আমি এ গ্রামে এসেছি। এদিকে পানি প্রবেশ করায় নদীর পানির চাপ কমবে। অন্য হাওরের দিকে আর যাবে না। টাগুয়ার হাওরে কৃষকরা সাহস করে নিজ উদ্যোগে ফসল রোপণ করেছেন। তাহিরপুর অংশে মাত্র ২৫ হেক্টর জমি হবে। তাই আতঙ্কের কিছু নেই। আমরা সব সময় নজর রাখছি। আর এই বাঁধটি মূলত গ্রামবাসীর অনুরোধে করা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দে মাধ্যমে।  মূলত এটি ফসল রক্ষা বাঁধ নয়।  

পানির উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বাংলানিউজকে জানান, এই বাঁধটি প্রকল্পের বাইরের। ওই জায়গায় কিছু ভাঙা অংশ ছিল সেটি মেরামত করা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে। এই বাঁধ পানি উপচে পড়ছে। এটি কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ নয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন টাগুয়ার হাওর রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়েছে এখানে ফসল লাগানোর কথা না। এমনিতেই নিষেধ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।