ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৫০ টাকার জন্য আন্দোলনে সিলেটের মাংস ব্যবসায়ীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
৫০ টাকার জন্য আন্দোলনে সিলেটের মাংস ব্যবসায়ীরা

সিলেট: প্রতিকেজি মাংসে আরও ৫০ টাকার জন্য আন্দোলন করছেন সিলেটের মাংস ব্যবসায়ীরা। দোকান না খুলে ক্ষতির মুখে পড়েও দাবি আদায়ের পক্ষে অটল তারা।

 

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু তাদের দাবি, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা করতে হবে। আর খাসির মাংস ৮শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকা করতে হবে।

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা একবার দাম বাড়ালে আর কমাবেন না। যদি তারা কথা দেন, রোজার পর দাম কমবেন, তবেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারে। অন্যথায় ধার্য্যকৃত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি করলে জরিমানা গুনতে হবে।  

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাংস ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে যাওয়ার আগে মেয়রের কাছে ৫০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখতে পারতেন। তা না করে চাপে ফেলতে তারা আন্দোলনে গেছেন। তারা রোজায় ৭২০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন। দাম বেশি রাখায় ৩টি দোকানকে জরিমানা করা হয়। এ কারণে তারা আন্দোলনে গেছেন।

তিনি বলেন, একবার দাম বাড়ালে তারা আর কমাবেন না। ফলে গরুর মাংস ৬শ’ এবং খাসির মাংস ৮০০ টাকা ধার্য করে দেওয়া হয়। তারা ২০/৩০ টাকা বাড়তি দাবি করলে সেটা বিবেচনা সাপেক্ষ ছিল। রাজশাহীতে গরুর মাংস ৬৩০ টাকা করা হয়েছে। ৫০ টাকা বাড়তি নেওয়ার জন্য তারা প্রস্তাব দিতে পারতেন। তবে তারা যদি কথা দেন রমজান পরে দাম কমবে, তখন নগর কর্তৃপক্ষও দাম বিচেনা করবে।  

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আন্দোলনে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা পাইনি। আমাদের দাবি ছিল ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হোক। তা না করে নগর কর্তৃপক্ষ ৬০০ টাকায় গরু ও খাসি ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে বলে। এ দামে ব্যবসা করা অসম্ভব।  

তিনি বলেন, আমরা কখনো আন্দোলনে যাইনি। কিন্তু আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আমরা শনিবার পর্যন্ত দেখবো। এরপর রোববার থেকে প্রয়োজনে সব দোকানপাট গুটিয়ে নেবো।  

ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেটের রেস্তোরাঁগুলোতে এখন মাংসের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা বারবার যোগাযোগ করছেন। তারাই জানেন, গরু জবাই করে রেস্তোরাঁয় মাংস বিক্রি করলে কেজি হাজার টাকায় গিয়ে পড়বে। তারপরও পোষাবে না। এ অবস্থায় যদি রেস্তোরাঁগুলো গরুর মাংসের দাম বাড়তি রাখে, নগর কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় যাবেন না!

নগরের আতাউল্লাহ মিট শপের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নগরে সব দোকান মিলে প্রতিদিন ৫০/৫৫টি গরু জবাই হয়। এক দোকানে গরু জবাই করলে তিন দোকানে ভাগবাটোয়ারা করে বিক্রি করে। নগর কর্তৃপক্ষও জবাই করা গরু প্রতি ১০০ টাকা করে পায়। কিন্তু আমরাতো অল্প লাভে তুষ্ট। সীমান্ত দিয়ে গরু না আসায় চড়া দাম দিয়ে বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে এনে বিক্রি করতে হয়। অথচ আমাদের দাবির পক্ষে কেউ কথা বলছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরে প্রায় ৭০টি মাংসের দোকান ছিল। এখন ৪২টিতে নেমে এসেছে। সমিতির ১১৮ সদস্য থাকলেও অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দোকানে চাকরি করেন। ব্যবসা ছেড়ে দেওয়াদের তালিকায় আছেন অন্তত ৩০ জন। তাদের কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। কেউবা অন্যের দোকানের কর্মচারী। কেউ পেশা ছেড়ে দিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করছেন।

মাংস ব্যবসায়ীদের কয়েকজন বলেন, দেশে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা মাত্র ৫০ টাকা বাড়তি চাচ্ছি। সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।

বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এক জরুরি বৈঠকে সিলেট মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতারা মাংস বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
এনইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।