ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের লাশ আটকে রেখে দুই ছেলেকে পুলিশে দিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
মায়ের লাশ আটকে রেখে দুই ছেলেকে পুলিশে দিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

খুলনা: খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মায়ের মরদেহ আটকে রেখে দুই ছেলেকে পুলিশে দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। শনিবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে।

হাসপাতাল ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের (৬৭) স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) শনিবার  দিবাগত রাত ৩টার দিকে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে ছেলে মো. মোস্তাকিমের। এ ঘটনায় পিয়ারুন্নেছার অপর দুই ছেলেকে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেন চিকিৎসকরা।  

রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বুকে ব্যাথা ও পায়খানা-প্রসাব না হওয়ায় শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ  হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সে রাতে চিকিৎসা করা হয়েছে। শনিবার রাতে আমার স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর হলে আমার ছেলে চিকিৎসককে ডাকতে গেলে কেউ আসেননি। উল্টো রোগীকে নিয়ে যেতে বলে। তখন ছেলে বলে রোগীকে কী করে আনব, তিনি তো মোটা মানুষ, আনা সম্ভব নয়। চিকিৎসক তখন কাগজপত্র আনতে বলেন। এরপর কাগজপত্র নিয়ে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসক তা দেখে বলেন, সব তো ঠিক আছে। কিন্তু রোগীকে দেখতে কোনো চিকিৎসক আসেননি। এরপর ওই রাতেই ছটফট করতে করতে আমার স্ত্রী মারা যায়। মায়ের এমন মৃত্যুতে আমার ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে চিকিৎসকের কাছে জানতে চায় তারা কেন দেখতে আসলেন না। এ নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয় চিকিৎসকের। আমি বিষয়টি জানতে পেরে চিকিৎসকের হাত-পা ধরে মাফ চাই। বলি আপনারা তো বোঝেন মা মারা গেছে তাই ওদের মাথা ঠিক নেই, আপনারা মাফ করে দেন। এসময় একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমার গায়েও আঘাত করেন এবং অপর দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দেন। তারা বর্তমানে সোনাডাঙ্গা থানায় আটক রয়েছেন। আর আমার স্ত্রীর মরদেহও হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামছুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্স এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আসলে তাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

মরদেহের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন পিয়ারুন্নেছার স্বজনরা

মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের ভাইপো মামুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার চাচীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাই মোস্তাকিমের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসান ও তার সঙ্গীদের সামান্য হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় তারা অপর চাচাতো ভাই সাদ্দামকে মেরে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং মো. তরিকুল ইসলাম কাবিরকে গালাগালি দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। আমরা চাচীর মরদেহের কাছে যেতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেলা ১১টা পর্যন্ত  আমাদের ভিতরে যেতে দেয়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি তো পরে এসেছি। আমি ওই ইউনিটের ডাক্তার নই। মনিশ কান্তি দাস ও প্রীতম কর্মকারের সঙ্গে রোগীর স্বজনের হাতাহাতি হয়েছে। আমি ইন্টার্নী চিকিৎসক পরিষদের পক্ষ থেকে এসে কথা বলেছি। আমরা অনেক আগেই মরদেহ ডিসচার্জ করে দিয়েছি। পুলিশ তার ২ ছেলেকে আটক করেছে, এখন তারা তদন্ত করে দেখবে। সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। ’

আর খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ মারা গেলে একটি প্রসিকিউট আছে। সে অনুযায়ী মরদেহ ছাড়তে হয়। মরদেহ আটকে রাখার কিছু নেই। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো জিডি বা মামলা করিনি।

অপরদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামছুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক দিক থেকে চেষ্টা করেও মরদেহ ও আটকদের ছাড়াতে ব্যর্থ হই। পরে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে যাওয়ার পর তিনি বলেন আইনি ব্যবস্থা নেবে নিক, আগে আটকদের ছেড়ে দাফনের ব্যবস্থা করুক। কিন্তু থানা থেকে ছাড়ছে না। থানায় গেলে পুলিশ বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো ছাড়তে বলছে না। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মামলা করবে। তাই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও কোনো সমাধানে আসতে পারিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।