ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শুরুতেই থমকে গেছে মেঘনার তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
শুরুতেই থমকে গেছে মেঘনার তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ

লক্ষ্মীপুর: মেঘনা তীরের বাসিন্দা বিবি সলেমা। দুই বছর আগে তিনি নদী ভাঙনের শিকার হন।

বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া এলাকায় একজনের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রিতা হিসেবে বসবাস করছেন। নদীতে সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। নিজের জমি কেনার টাকা নেই, তাই অন্যের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। সে আশ্রয়স্থলও হারানোর শঙ্কায় আছেন। কারণ মেঘনা তাদের বসতবাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।  

একই এলাকার ভাঙনের শিকার গোলবানু, শারমিন আক্তার, আনোয়ারা বেগম ও জরিনা বেগমদের গল্প একই। তাদের ভাগ্যে ঘটেছে একই ঘটনা। এরা সবাই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন।  

সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন। পুরুষদের পাশাপাশি এসব নারীরাও তাদের আশ্রয়স্থল রক্ষায় সরকারের নেওয়া তীররক্ষা বাঁধ দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।

ভুক্তভোগী এসব নারীরা বাংলানিউজকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর সরকার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ না করার কারণে নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। দ্রুত বাঁধ দেওয়া হলে অনেকের বাড়িঘর রক্ষা পাবে।  

উপজেলার লুধুয়া এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ শত শত লোকজন তাদের বসতবাড়ি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। এতে বক্তব্য দেন- স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম মাস্টার, সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজ হাওলাদার, জাহাঙ্গীর তালুকদার, আবু সিদ্দিক, সিরাজুল ইসলাম, আবদুল করিম ও রাকিব হোসেন লোটাস প্রমুখ।  

তারা বলেন, প্রতিনিয়ত মেঘনা নদীর করাল গ্রাসে তারা সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। দিন যতই যাচ্ছে, ততই মেঘনা গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, হাট বাজার, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তাই শিগগিরই বাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেয়েও তারা ঠিকমতো কাজ শুরু করেনি। জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর জন্য বালু সংকট দেখিয়ে তারা কাজ শুরু না করতেই বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ভাঙনরোধ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।  

তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবি ছিল ঠিকাদারের মাধ্যমে তীররক্ষা বাঁধের কাজ না করিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার। এখন ঠিকাদার কাজ শুরু না করতেই বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম, এ সময়টাতে বাঁধ নির্মাণের উপযুক্ত সময়। বর্ষাতে নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে পানির চাপ বেড়ে যায়। তখন ভাঙন প্রতিরোধের কাজ ব্যাহত হয়। কিন্তু অসাধু ঠিকাদার বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা চাই প্রয়োজনবোধে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নদীর তীরে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করার। এছাড়া বাঁধ নির্মাণে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেজন্য সরকারের নজরদারির দাবিও জানাচ্ছি।  

জানা গেছে, বিগত ৩০ বছরে মেঘনা নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা।  

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট বাজার’ তীররক্ষা প্রকল্প নামের ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১ জুন পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

গত বছরের ১৭ আগস্ট ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং ১৮ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। টেন্ডারের মধ্যমে মোট ৩ হাজার ৪০০ মিটার কাজ হবে। গত ৯ জানুয়ারি দুটি লটের কাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঠিকাদাররা চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং এর কাজ করতো। কিন্তু সেখানে বালু
সংকটের কারণ দেখিয়ে তারা সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে। আমরা তাদের কাজ দিয়েছি- তারা কোথা থেকে বালু সংগ্রহ করবে সেটা তাদের বিষয়। আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি, তারা যেন কাজ বন্ধ না রেখে কাজ চালিয়ে যায়। আশাকরি আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে তারা কাজ শুরু করবে।  

তিনি বলেন, এ শুষ্ক মৌসুমে শুধুমাত্র ডাম্পিং এর কাজ করা যাবে। ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমে শুরু করা যাবে।  
ফারুক আহমেদ জানান, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নদীর তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ কাজ ৯৯ ভাগে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এরমধ্যে ২৪টি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯ জন ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। বাকি ৫ জন ঠিকাদার কাজ শুরু করবেন।  

কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত মাত্র এক ভাগ কাজ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।