ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
‘আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম’ বটমূলে প্রভাতী আয়োজন চলছে ছায়ানট। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ‌‘আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম/ ঘরে এলে ফিরে পরবাসী প্রিয়তম’। সত্যিই, আজ সকালে সূর্য ওঠা যেন আসলেই সফল হলো।

অন্তত করোনার কারণে যেখানে দুই বছর বর্ষবরণের কোন আয়োজন হয়নি।  সেখানে আজ সকালের নতুন সূর্য সফলভাবেই জানান দিয়েছে নতুন বছরের আগমনী বার্তার। সে বার্তা সামাজিক সব অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার বার্তা। আর তার মানস নিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ বরণ করতে প্রভাতী আয়োজন করেছে ছায়ানট। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে রমনার বটমূলে সূচনা হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ ১৪২৯ এর অনুষ্ঠান। এর পরপরই পরিবেশন করা হয়েছে সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগ’ মঙ্গললোকে’। এর মধ্য দিয়ে করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর সাড়ম্বরে উদযাপন হলো পহেলা বৈশাখের।

সকালে আয়োজন শুরু হওয়ার আগেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ আয়োজনে যোগ দিতে ছুটে আসে মানুষ। লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় দলে দলে ভিড় করেছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের হাতে ছিল ফুল, মাথায় ফুলের টায়রা, গালে বৈশাখী আলপনা। বৈশাখের প্রভাতী এই আয়োজনে এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ এবং বৈশাখ উপলক্ষে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি। আমাদের এই সংস্কৃতির আরও প্রসার ঘটাতে হবে, আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান সাজানো হয় ৩৭টি সঙ্গীত আয়োজন দিয়ে। এর মধ্যে পঞ্চকবির গান, ব্রতচারীদের ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’, লোকগান ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’ প্রভৃতি গান রয়েছে। সঙ্গে ছিল আবৃত্তি-পাঠের মতো বিষয়গুলোও। এবারের পরিবেশনে অংশ নেওয়া শিল্পী সংখ্যা ৮৫ জন। ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তবে এবার তিনি ৯০ বছরে পা দিয়েছেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল। তাই সেভাবে কথা বলেননি। তবে গেয়ে শুনিয়েছেন।

আর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মফিদুল হক বলেন, হৃদয়ে বাংলা নববর্ষকে ধারণ করে মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রাণিত করে বাংলা নববর্ষ। এই প্রত্যয়ের আহ্বানে অর্ধশতাধিক বছর ধরে সুর ও বাণীর আবহে রমনার বটমূলে আয়োজিত হচ্ছে বাঙালির মিলন মেলা। অতিমারির কারণে গত দুই বছর সামাজিকভাবে আমরা বন্দি হয়ে ছিলাম। সেই দুঃসময় কাটিয়ে এবার নব আনন্দে জাগার আয়োজন আমাদের। গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এখানে এ অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে। ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।