পিরোজপুর: পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারে কারচুপি, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নয়ছয় করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার নামে।
সম্প্রতি নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজী তার পছন্দের ঠিকাদারকে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ১১০ কোটি টাকার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় কয়েকজন ঠিকাদার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, পিরোজপুর-১, ২ ও ৩ আসনের সংসদ সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), প্রধান প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজী ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি পিরোজপুরে যোগ দেন। সেই থেকে তিনি বিভিন্ন টেন্ডারে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করেই চলছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজী পিরোজপুরে যোগ দেওয়ার পর সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে একাধিক কাজ পাইয়ে দেন। দিনের পর দিন একই ঘটনা ঘটতে থাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে। শূন্য অভিজ্ঞতার লাইসেন্স মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তিনি তা করেছেন। অপরদিকে দুয়েকটি কাজ অন্যান্য ঠিকাদাররা পেলেও তাও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাড়ির ড্রাইভার শাহিনসহ তার একান্ত অনুসারী ঠিকাদাররা পান। এছাড়া যেনতেন ভাবে কাজ শেষ করে বিল তুলতে ঠিকাদারকে সহযোগিতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে তার এসব অবৈধ কাজের আর্থিক লেনদেন করেন ওই অফিসের হিসাব রক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন।
জানা গেছে, ইজিপির তথ্যানুযায়ী বিগত প্রকৌশলীর আমলে পল্লী অঞ্চল নামে দুটি পানি বিশুদ্ধ করণ প্লান্টের টেন্ডার হয়। এই টেন্ডারে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র না থাকায় ফয়সাল এন্টার প্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় (আইডি-৬১৭৮৭৬) কাজটি বাতিল হয়। প্রকৌশল আব্দুল আলিম গাজী এসে ফের দরপত্র আহ্বান করে ১০ শতাংশের কাছাকাছি রেট দিয়ে কাজটি ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে পাইয়ে দেন। একই ভাবে গত একবছরে ১১০ কোটি টাকার কাজ পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে এ কাজ পাইয়ে দেন উল্লেখ করে কয়েকজন ঠিকাদার এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, পিরোজপুর-১, ২ ও ৩ আসনের সংসদ সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), প্রধান প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী পিরোজপুরের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে সহযোগিতা করেন। এর আগে খুলনায় নিজের ভগ্নিপতির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েলকাম মটর্সের নামে পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক কাজ পাইয়ে দেন তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজীর বিরুদ্ধে এমন আরও বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম গাজী বলেন, কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো টেন্ডার হলে তাতে আমিই সব ক্ষমতার অধিকারী নই। এজন্য নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। আমি ওই কমিটির একজন সদস্য মাত্র।
তিনি আরও জানান, গত বছরের মার্চ মাসের একটি টেন্ডারের বিষয়ে জানা না থাকলেও আমাকে জড়িয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ১৬ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড