ঢাকা: রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রায় দুই বছর পর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবারের ঈদকে ঘিরে বাড়তি উদ্দীপনা সর্বস্তরেই।
ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করাসহ ফাঁকা ঢাকায় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি তৎপরতা রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
ঈদের ছুটিতে নগরবাসীর বাসা-বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন অফিস, মার্কেট খালি থাকে কয়েকদিন। এ সুযোগে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে যেকোনো ধরনের অপরাধ রুখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ আয়োজনে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঈদ আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি থাকছে নিরাপত্তা বাহিনীর সবকটি ইউনিটের বাড়তি তৎপরতা।
এ সময়ে যেকোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে বিপুল সংখ্যক পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে পর্যাপ্ত সাদা পোশাকের পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে র্যাব-পুলিশের চেকপোস্ট। আর প্রতিটি এলাকাতেই থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি টহল টিম।
ডিএমপি জানায়, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপির ৫০টি থানায় ১০টি করে সর্বমোট ৫০০ টিম মোবাইল টিম কাজ করবে। এছাড়া, রাজধানীজুড়ে রাতের নিরাপত্তায় আড়াই হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
পুলিশের কার পেট্রোল টিম ও মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। এলাকা ভিত্তিক বিট পুলিশিংয়ে দায়িত্বরতরাও নিজ নিজ এলাকার সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখছেন।
ঈদের ছুটিতে ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় অনেকেই এটিএম বুথ ব্যবহার করবেন। সেখানে যেন কাউকে অপরাধী চক্রের শিকার না হতে হয় সেজন্য রাজধানী বিভিন্ন বুথের আশপাশে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে খ্যাত গুলশান-বারিধারা এলাকা ঘিরে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রবেশ এবং বাহির পথে রয়েছে চেকপোস্ট। এলাকার মধ্যে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল টিম। এসব এলাকায় নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে টহল টিমের সদস্যরা সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতকে কেন্দ্র করে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে সবাইকে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হবে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এছাড়া রাজধানীজুড়ে সব ঈদ জামাতকে ঘিরে সমন্বিত, সুদৃঢ় ও সুবিন্যস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার (২ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের টহল টিমগুলো প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে আবাসিক এলাকার অলিগলিতে যাচ্ছেন। বাসা-বাড়ির দারোয়ানদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন চেকপোস্টে কারো গতিবিধি সন্দেহজনক হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছেন।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক ছিনতাইকারী ও চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আজ থেকে ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষ। মার্কেট ও বাসাগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে প্রতিটি থানা এলাকায় টহলটিম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আশা করি সামনের দিনগুলোতে তেমন কোনো ঘটনা ঘটবেনা।
তিনি বলেন, বাসার মালিকও চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রাখবেন। এসব চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে প্রাথমিক দায়িত্ব আপনার, পরের কাজটা আমাদের।
রাজধানীজুড়ে ঈদগাহ ও মসজিদ মিলিয়ে ১ হাজার ৪৬৮ স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো কোনো মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে সারা শহরের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সকল ঈদ জামাতকে ঘিরেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে ডিএমপি।
চুরি ছিনতাই রোধে ফাঁকা ঢাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এই সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। ডিএমপির পঞ্চাশটি থানাতেই আমরা অতিরিক্ত ফোর্স দিয়েছি।
ঈদুল ফিতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারো র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকল ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য থাকবে র্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, ফুট ও মোবাইল পেট্রল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, অবজার্ভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট এবং সিসিটিভি মনিটরিং।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্যুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিনা। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২২
পিএম/কেএআর