ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘সাংবাদিকদের স্বাধীনতার ওপর হুমকি দিনে দিনে বাড়ছে'

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২২
‘সাংবাদিকদের স্বাধীনতার ওপর হুমকি দিনে দিনে বাড়ছে'

ঢাকা: সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতার ওপর হুমকি দিনে দিনে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।  

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য থেকে জলবায়ু সংকট, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন, সব বিষয়ে কাজ করতে গিয়েই তাঁরা ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকীকরণের শিকার হচ্ছেন এবং অনেক দিক থেকেই তাঁদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে।

৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমরা ক্ষমতাসীনদের সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ঝুঁকিতে পড়া সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের অন্যান্য কর্মীদের ওপর আলোকপাত করছি।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির পুরো সময়টা জুড়ে অনেক সংবাদকর্মী সম্মুখ সারিতে ছিলেন, যাঁরা জীবন বাঁচাতে ও সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের সহযোগিতা করতে যথাযথ ও বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করেছেন। একই সময়ে জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য ও দূষণ নিয়ে সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিকেরাও এই গ্রহের ত্রিবিধ সংকটের বিষয়ে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণে সফল হয়েছেন।

ডিজিটাল প্রযুক্তি তথ্যপ্রাপ্তিকে গণতান্ত্রিক করেছে। তবে এটি গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফরমেরই ব্যবসায়িক মডেল যথাযথ খবর প্রাপ্তি নিশ্চিত করা নয়, বরং ব্যবহারকারী টানার দিকে মনোযোগী, যা প্রায়শ ক্ষোভ উসকে দিতে ও মিথ্যা ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সংবাদকর্মীরা শুধু বোমা আর বুলেটের আঘাতের ঝুঁকিতেই নেই, মিথ্যা ও গুজবের ঝুঁকিতেও রয়েছেন, আধুনিক যুদ্ধের সময় যা ব্যাপকভাবে ছড়ায়। শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের জন্য শত্রুর আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি যেমন রয়েছে তাঁদের, একইভাবে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া, আটক বা গ্রেফতার, এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতেও থাকেন তাঁরা।

ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ আরোপকে আরও সহজ করে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেক সাংবাদিক ও সম্পাদক তাঁদের অনুষ্ঠান ও প্রতিবেদন অপসারণের অব্যাহত ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং দমন ও অপব্যবহারের নতুন দিক উন্মোচন করেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। নারী সাংবাদিকরা বিশেষত অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছেন।  

ইউনেস্কো জানিয়েছে, তাদের সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতি চারজন নারীর তিনজন জানিয়েছেন, তাঁরা অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। হ্যাকিং ও বেআইনি নজরদারিও সাংবাদিকদের দায়িত্বপালনে বাধার সৃষ্টি করে।

পদ্ধতি আর উপকরণ পরিবর্তিত হলেও সংবাদমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করার ও সত্য লুকানোর লক্ষ্য বরাবরের মতো একই রয়ে গেছে। ফলাফলও একই, জনগণ ও সমাজ সত্য আর মিথ্যাকে আলাদা করতে পারে না, এবং ভীতিকরভাবে তাদের বিভ্রান্ত করা যায়।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ সম্ভব নয়। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো স্বাধীনতা নেই।

জাতিসংঘ বিশ্বের সব জায়গায় সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা করতে কাজ করে যাচ্ছে। ১০ বছর আগে আমরা সংবাদকর্মীদের সুরক্ষায় এবং তাঁদের ওপর হওয়া অন্যায়ের দায়মুক্তি রোধে ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য কর্ম পরিকল্পনা’  প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমরা সত্য প্রকাশ, মিথ্যাকে তুলে ধরতে এবং দৃঢ় ও অভিঘাত সহনশীল প্রতিষ্ঠান ও সমাজ গঠনে সংবাদমাধ্যমের অতি জরুরি কাজকে শ্রদ্ধা জানাই।

আমরা বিশ্বের সব সরকার, সংবাদ সংস্থা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সমর্থন দিতে আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২২
টিআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।