ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দুই সদস্য আটক 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২২
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দুই সদস্য আটক 

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট নিয়ে কালোবাজারির কারনে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের পর অবশেষে মিলন ও আহসান নামের টিকিট সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বৃহস্পতিবার (০৫ মে) দুপুরে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টিকিট কালোবাজারি চক্রের দুইজনকে টিকিটসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, মিলন মিয়া (২৭) ও আহসান হাবিব (২৫)।  

মিলন রেল স্টেশন সংলগ্ন কালে মৌজার রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং আহসান খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন মেসার্স মাহি ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী বলে জানা যায়। কুড়িগ্রামে রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি বিষয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ তাদের ধরতে সহায়তা করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একদল টিকিট কালোবাজারির অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। প্রতিদিন সকালে লাইনের শুরুতে সিন্ডিকেট করে কালোবাজারি ও তাদের সহযোগীরা দাঁড়িয়ে আগেভাগেই সব টিকিট কিনে নিতো। পরে তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ দামে টিকিট নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন সাধারণ যাত্রীরা।

ঈদুল ফিতরের কারণে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম ও কুুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা ট্রেনের টিকিট কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল অনেক যাত্রীকে। প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দামে কালোবাজারে টিকিট মিললেও অফলাইন এবং অনলাইনে কোন টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি সবসময় টিকিট কাউন্টারের সামনে ২০টি চেয়ার লাইন করে বসিয়ে রাখারও অভিযোগ ছিল। চেয়ারগুলোর মালিক স্থানীয় দোকানদার ও প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে চেয়ারের বাঁধা ভেঙে টিকিট সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ছিল।

কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন কাউন্টারে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের জন্য টিকিট বরাদ্দ মাত্র ৬০টি। আর রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২১টি টিকিট। ফলে বরাবরই টিকিট সংকটে যাত্রী ভোগান্তি লেগে থাকে। এর মধ্যে কালোবাজারিদের তৎপরতায় এ ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ও রেল আন্দোলন নেতা আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, টিকিট কালোবাজারিদের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছিলেন না। লাইনের শুরুতে সিন্ডিকেট করে কালোবাজারি ও তাদের প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে আগেই সব টিকিট কেটে নিতো। তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ বেশি দামে টিকিট নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন যাত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলেও প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। পরে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে টিকিট কালোবাজারি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় কুড়িগ্রামের মানুষ আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী টিকিট কালোবাজারিদের সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষ রেল যাত্রায় ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। বিষয়টি ছাত্রলীগের নজরে আসলে ছাত্রলীগ তাদের অবস্থান থেকে জনভোগান্তি নিরসনে সহায়তা করে।

কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, কুড়িগ্রামে আন্তঃনগর ট্রেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার। কিন্তু ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে যাত্রীরা বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। বিশেষ করে ঈদ যাত্রায় এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি রেল আন্দোলন নেতা আব্দুল কাদের ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে আমরা টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা চাই। আমাদের কর্মীরা মাঠে থেকে সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করতে কাজ করে।

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন মাস্টার সামসুজ্জোহা টিকিটের স্বল্পতা ও কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়ে মাওয়ায় আমরা টিকিট দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এরমধ্যে যাত্রীদের বেশে কালোবাজারিরা টিকিট নিয়ে সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আশিকুর রহমান পিপিএম বাংলানিউজকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিলন ও আহসানকে আটক করা হয়েছে। কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২২
এফইএস/ আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।