ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কেবিনের টিকিট, ডেকের জায়গা নিয়ে কালোবাজারি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২২
কেবিনের টিকিট, ডেকের জায়গা নিয়ে কালোবাজারি

বরিশাল: ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রাজধানীতে ফিরছে মানুষজন। শনিবার (০৭ মে) দুপুরের পর থেকেই বরিশাল নদীবন্দরে আসতে থাকেন লঞ্চযাত্রীরা।

যে সব যাত্রী অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি, লঞ্চের ডেকে তাদের জায়গা করে নিতে দেখা গেছে। অনেকে নদীবন্দরে এসে কালোবাজারিদের দ্বারস্থ হয়ে চড়া দামে কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বরিশাল নদীবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকার সদরঘাটমুখী লঞ্চগুলোতে কেবিনের কোনো টিকিট নেই। এ দিনের কেবিন টিকিট কয়েকদিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

তবে পন্টুন ও নদীবন্দর কেন্দ্রিক দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে। যাত্রীদের অবস্থা বুঝে চড়া দামে কেবিনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারা।

স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় যাবেন শাহাবুদ্দিন। গত দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও কেবিনের টিকিটি পাননি তিনি। তবে শনিবার বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ ঘাটে এসে কেবিনের জন্য কিছু লোককে ডাকাডাকি করতে দেখেন। তাদের কয়েকজন স্টাফদের কেবিন ভাড়া দেওয়ার জন্য যাত্রী খুঁজছেন আর কয়েকজন সরাসরি লঞ্চের সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের টিকিট দিতে পারবেন বলে জানান।

১৪-১৫শ’ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ৩ হাজার টাকা আর আড়াই হাজার টাকার ডাবল কেবিনের ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। নাগালের মধ্যে না পড়ায় বাধ্য হয়ে ডেকে চাদর বিছিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন শাহাবুদ্দিন।



বরিশাল-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী জিয়াউল করিম জানান, পন্টুনে এসে দেখলাম কিছু লোক কেবিন লাগবে কিনা জানতে চাইছেন। এরপর ভাড়া জিজ্ঞাসা করতেই দ্বিগুণ-তিনগুণ চাইছেন। প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে আস্তে ধীরে কেবিনের কথা বলছেন দালালরা। দরে বনলে কেবিনের স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন। তবে সেই সব স্লিপ অন্য নামে বুকিং দেওয়া।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক লঞ্চের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, আমরা নিয়ম অনুযায়ী সশরীরে আসা যাত্রীদের মোবাইল নম্বর রেখে কেবিনের স্লিপ দিয়েছি। চিহ্নিত কোনো দালালের হাতে টিকিট যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে যাত্রী সাজিয়ে কাউকে দিয়ে টিকিট নিলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করারও নেই বলে জানান কাউন্টার ম্যানেজাররা।

সুরুভি লঞ্চ কোম্পানির রাশেদ জানান, অনেক যাচাই-বাছাই করে তাদের লঞ্চের কেবিনের টিকিট দেওয়া হয়। দালালদের হাতে তাদের লঞ্চের কোনো টিকিট যাওয়ার সুযোগ নেই।

এ দিকে টিকিট না পেয়ে যারা ডেকে যাচ্ছেন সেখানে লেপ, চাদর ও তোশক পেতে লঞ্চের স্টাফরা জায়গা দখল করে রাখছেন। পরে তাদের কাছ থেকে সেই জায়গা কিনে বসতে হচ্ছে যাত্রীদের।

পারাবত লঞ্চ কোম্পানির এক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সব লঞ্চেই সবসময় বিভিন্ন স্থানে তোষকের ব্যবস্থা রয়েছে। আর ঈদের সময় একতলা-দোতলার ডেকে তোশক, চাদর ও লেপ বিছিয়ে রেখে তা যাত্রীদের কাছে বিক্রি করাও একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর জায়গা বুঝে এর ভাড়াও  নির্ধারণ করা হয়। নিচতলার চেয়ে দোতলার ডেকের জায়গার দাম একটু বেশি।

ঢাকাগামী যাত্রী বাদশা বলেন, কেবিন পাইনি, তাই স্টাফদের কাছ থেকে ডেকের তোশকের জায়গা ভাড়া নিয়ে যেতে চাচ্ছি। তবে তার দামও বেশি চাচ্ছে। এক লঞ্চ থেকে আরেক লঞ্চে যাচ্ছি, কোথাও কম দামে পাই কিনা সেই চেষ্টা করছি।

তবে ডেকের জায়গা ভাড়া দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।

যাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্ত নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ সমন্বয় করে কাজ করছে বলে জানান বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। সেই সাথে ডেকের জায়গায় তোশক বিছিয়ে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিয়ে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২২
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।