ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ওটিতে সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু, সাড়ে ৩ লাখ টাকায় রফা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২২
ওটিতে সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু, সাড়ে ৩ লাখ টাকায় রফা

নড়াইল: নড়াইলের কালিয়ায় একটি ক্লিনিকের অপারেশান থিয়েটারে শিউলী বেগম (২৫) নামে এক প্রসূতি ও তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অনুমোদনহীন ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর পরিবারকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাতেই মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

নিহত শিউলী উপজেলার নড়াগাতি থানার খাশিয়াল ইউনিয়নের চৌকিদার আকবর হোসেন মোল্যার মেয়ে ও গোপালগঞ্জ সদর থানার শুকতাইল গ্রামের মো. জিন্নাত আলীর স্ত্রী।

জিন্নাত আলী বাংলানিউজকে জানান, সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের জন্য ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তার স্ত্রী শিউলী বেগমকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সকাল ১০টার দিকে রোগীকে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা পার হলেও অপারেশন শেষ না হওয়ায় তিনি সহ তার স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা রোগীর খোঁজ জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন রোগীর প্রেসার কমে গেছে তাকে খুলনায় পাঠাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কিছুক্ষণ পর কর্তৃপক্ষের ডাকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্লিনিকের সামনে আসে। এসময় অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় শিউলীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করলে তাদের সন্দেহ হয়। শিউলীর মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ক্লিনিকের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই ফাঁকে পেছন দরজা দিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে চলে যান ডাক্তার। তখন নড়াগাতি থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

দায়িত্বহীনতা ও রোগীর প্রতি অবহেলার কারণে তার স্ত্রীসহ অনাগত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, শিউলীর রেখে যাওয়া ৪ বছরের মেয়ে জামিলার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মিমাংসার পথ বেছে নেন। সাড়ে ৩ লাখ টাকায় নিষ্পত্তির পর স্ত্রীকে দাফন করেছেন। এ নিয়ে তিনি এখন আর কোনো অভিযোগ করতে চান না।

শিউলীর বাবা চৌকিদার আকবর হোসেন মোল্যা বাংলানিউজকে বলেছেন, অপারেশন করতে নিয়ে ইনজেকশন দেয়ার পর তার প্রসূতি মেয়ে মারা গেছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাড়ে তিন লাখ টাকায় মিমাংসা করে মেয়ের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

ক্লিনিক মালিক খান শাহীন সাজ্জাদ পলাশের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্বব হয়নি (০১৭৩৭০০৫০৮৭)। ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় ডাক্তারে নাম ঠিকানা জানা যায়নি।

উপজেলার নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বাংলানিউজকে বলেছেন, খবর পেয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেছেন, শনিবার তিনি ঘটনাটি জানতে পেরে কালিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনে ও ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেবেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিক বাংলানিউজকে বলেছেন, রোববার থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।