ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টানলেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২২
টানলেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং! হাত দিয়ে টানলেই পিচ উঠে যাচ্ছে

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত নিম্নামানের হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে তড়িঘড়ি করে রাস্তার কার্পেটিং করায় ১৫ দিনেই কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে পিচের রাস্তাটি।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের ইটের খোয়া আর নাম মাত্র পিচ ব্যবহার করা হয়েছে রাস্তার কাজে। উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদার এমন দায়সারা কাজ করেছেন।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মিরপুর উপজেলাধীন সদরপুর জিসি-আলমডাঙ্গা আরঅ্যান্ডএইচ সড়ক (চে: ০০-৬০৫ মি.) প্রশস্তকরণ কাজের জন্য (ইজিপি আইডি- ৬০৭২৪৭) এর টেন্ডার দেওয়া হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়- ৪৬ লাখ ৪ হাজার ১৯ টাকা। চুক্তিমূল্য হয় ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৮ টাকা ৫ পয়সায়। কার্যাদেশ হয় ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর। কাজটি শুরু হয় ২৩ নভেম্বর ২০২১। এবং শেষ হয় ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি। কাজটির ঠিকাদারি কার্যাদেশ পায় মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ।  

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কার্পেটিং করা হয়েছে। যা হাত দিয়ে টানলেই উঠে যাচ্ছে। একদিনের বৃষ্টিতেই কয়েক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে। সড়কে পানি নিষ্কাশনের জন্য কালভার্টের দরকার হলেও সরু পাইপের মতো কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। খুবই নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে কিছু কিছু স্থানে উঁচু নিচু হয়ে গেছে নতুন এ রাস্তার। ৪০ মি.মি. কার্পেটিং করার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে ২৫ মি.মি. কার্পেটিং করার। এদিকে কাজের কোনো বিলবোর্ড কাজের কোথাও দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  

অভিযোগ রয়েছে, যাদের এ কাজটি তদারকি করার কথা, তারা শুধু এসে ফটোশ্যুট করে নিয়ে চলে যাওয়ার পরে আর আসেননি। নিম্নমানের এ রাস্তা টেকসই হবে না।  

সদরপুর বাজারের ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, নাম মাত্র পিচ দিয়ে রাস্তা করলে যা যায়! ঠিকমতো রোলিং না করেই পিচ দিয়ে গেছে। যার ফলে পিচ হাত দিয়ে টানলেই উঠে যাচ্ছে। আগের রাস্তা এর চেয়ে টেকসই ছিল। দুধ বিক্রি করে ঘোল কেনার মতো অবস্থা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ, শুধুমাত্র দেখা ছাড়া তো কিছু করার থাকে না। যারা দেখার দায়িত্বে, তারা অফিসেই বসে থাকেন। তবে এমন কাজের ফলে সরকারের বদনাম হয়।

মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, উপজেলার মিরপুর উপজেলাধীন সদরপুর জিসি-আলমডাঙ্গা আরঅ্যান্ডএইচ সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়ে গেছে। কাজের মান সবই ঠিক ছিল, কিন্তু কার্পেটিংটা সঠিক মানের হয়নি।  

পিচের কার্পেটিং লেয়ার কম উল্লেখ করে তিনি জানান, এটার এখনো বিল দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এটা অনুমোদন দেয়, তাহলে বিল পাবে, না হলে আবার সঠিকভাবে কার্পেটিং করতে হবে। কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ। তবে তিনি কাজটি মিঠু নামে এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন। ঠিকাদার মিঠু কাজটি বাস্তবায়ন করেন।  

মিঠুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজের মান ঠিক থাকার কথা। তবে যেহেতু ভেঙে যাচ্ছে, তাহলে গিয়ে দেখব। আর অনেকগুলো কাজ পেইন্ডিং থাকার কারণে কাজ করতে দেরি হয়ে গেছে। ঈদের আগে কাজটি শেষ হয়ে গেছে।  

মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ জানান, নিম্নমানের কাজ হয়েছে এমন কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। আর কাজ এখনো শেষ হয়নি। আপনি অফিসে এলে ঠাণ্ডা মাথায় সব খুলে বলা যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।