ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পরিত্যক্ত সেতুতে হাঁস পালনে ভাগ্যবদল ওয়ারিসের

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২২
পরিত্যক্ত সেতুতে হাঁস পালনে ভাগ্যবদল ওয়ারিসের

মৌলভীবাজার: মহাসড়কের এক স্থানে দুটি সেতু। একটি সচল, অপরটি পরিত্যক্ত।

সচল সেতুটি নির্মাণের সময় বাইপাস রোড হিসেবে অপর সেতুটির জন্ম। নতুন সেতু তৈরির আগে দৈনিক শতাধিক যানবাহনের বোঝা সহ্য করেছে মাঝারি আকারের সেতুটি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ সেতুটি পরিত্যক্ত।

তবে সেতুটি একেবারে অব্যবহৃতও নয়। ওয়ারিস মিয়া নামে এক খামারির ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তে সেই সেতুতে পালন করা হচ্ছে ২৬শ হাঁস। পরিত্যক্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার উপযোগী করে নেওয়া এই উদ্যোগ যেন সময়ের অন্যতম উদাহরণ।

ছবি: বাংলানিউজ

সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে বাংলার প্রান্তর ছুঁয়ে থাকা এই দৃশ্য হৃদয় ভরিয়েছে পথচারী-দর্শনার্থীদের। আর এই সেতুটির অবস্থান হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা সংলগ্ন ফান্দাউক মহাসড়কের বুড়িশ্বরে।

খামারি ওয়ারিস মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে আমি হাঁসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার এখানে দুই হাজার হাঁসের ছানা রয়েছে। এগুলো আমি একেবারে ছোট থেকে পালন করে বড় করেছি। আর ওই মাথায় আরও ৬শ বড় হাঁস রয়েছে। ওগুলো নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। আমি প্রতিদিন হাঁসগুলোকে নদীর পাড়ে খাওয়াতে নিয়ে যাই।

ছবি: বাংলানিউজ

হাঁসপালন করতে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই হাজার হাঁসের ছানার দাম নিয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এগুলো এনেছি হবিগঞ্জ শহর থেকে। প্রতিটি প্রায় ৩০ টাকা করে পড়েছে। আর বড় হাঁসগুলো গত বছরের আষাঢ় মাসে আনা হয়। প্রতিটির দাম পড়েছে ১৭ টাকা। গত বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার হাঁসের ছানা নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করি। এদের মধ্যে এখন ৬০০ হাঁস আছে। গত আশ্বিন মাস থেকে খাবারের অভাবে হাঁসগুলো কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ফলে সবগুলোকে বাঁচাতে পারিনি। প্রতিদিন ৩শ-৪শ হাঁস মারা যায়। তবে এখন ওই হাঁসগুলো নিয়মিত ডিম দেওয়ায় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি।

ডিম বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই ৬শ হাঁস থেকে সপ্তাহে গড়ে এক থেকে তিন হাজার ডিম পাচ্ছি। পাইকারি প্রতি হালি বিক্রি করি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। ডিম বেশি দেওয়া বা কম দেওয়া- এটা খাবারের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের বিলে-নদীতে প্রাকৃতিক খাবার একেবারে নেই। তাই কিনেই খাবার খাওয়াতে হয়। ছোট ছানা হাঁসগুলোর ডিম পাড়তে প্রায় ভাদ্র মাস লেগে যাবে।

ছবি: বাংলানিউজ

পরিত্যক্ত সেতুতে হাঁসপালনের জন্য অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওয়ারিস মিয়া বলেন, এই সেতু তো নষ্ট হয়েই পড়ে ছিল। নানা ধরনের আগাছা ও ছোট গাছপালায় ভরা ছিল। আমি যদি এখানে হাঁসপালন না করতাম সেতুটা আরো নষ্ট হয়ে যেতো। আমি জায়গার অভাবে হাঁসপালন করতে পারছিলাম না। এলাকার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে এই স্থানে হাঁসচাষের অস্থায়ী অনুমতি নিয়েছি।

প্রায় সাড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা হাঁসের পেছনে ব্যয় করার কথা জানান ওয়ারিস মিয়া। তিনি আরও বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২২
বিবিবি/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।