ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শরীয়তপুরে ‘ভুল চিকিৎসায়’ প্রসূতির মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২২
শরীয়তপুরে ‘ভুল চিকিৎসায়’ প্রসূতির মৃত্যু

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার বাজারে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় সন্তান প্রসবের সময় রুজিনা বেগম (৩৪) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা দেড় লাখ টাকায় দফারফা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোববার (৮ মে) দিনগত রাতে উপজেলার ঘড়িষার বাজারের আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। রুজিনা উপজেলার ঘরিসার ইউনিয়নের সুরেশ্বর গ্রামের অটোচালক শাহ আলমের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দফারফার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওই দিনই গৃহবধূর লাশ দাফন করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে স্থানীয়দের মাধ্যমে সালিশ ডেকে দেড় লাখ টাকায় গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক সামসুজোহা পলাতক।

গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা জানান, নির্ধারিত দিনে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য শনিবার দুপুরে ওই হাসপাতালে রুজিনা বেগমকে ভর্তি করা হয়। পরে রাতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান হাসপাতালে থাকা ডা. মো. সামসুজোহা। অপারেশনের আগে অচেতন করার জন্য রুজিনাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে রুজিনা চিৎকার শুরু করেন। স্বজনরা রোগীর কাছে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধা দেন। এসময় একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অপারেশন থিয়েটারেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর রক্তচাপ কমে গেছে অজুহাতে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চালাকি বুঝতে পেরে রুজিনার স্বামী শাহআলম ও অন্য স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে বাধা দেন। এতে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয়রা জড়ো হলে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হয়। এ অবস্থায় হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সুযোগে পেছনের দরজা দিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতালের লোকজন পালিয়ে যান।

সালিশে উপস্থিত স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোববার দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। গৃহবধূর স্বামী এবং বাবা গরিব মানুষ। এজন্য তারা মামলা করতে রাজি হননি। তাই নবজাতক ও পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দুই লাখ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।

মৃত রুজিনার স্বামী শাহ আলমের কাছে টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শংকর চন্দ্র কর বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে রুজিনার স্বামীর কাছ থেকে আগেই আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়- মর্মে লিখিত নিয়েছে। তবে গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আধুনিক হাসপাতালের চেয়ারম্যান আব্দুর রব খান বলেন, টাকা দিয়ে তাদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছি।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ শুনেছি। মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।