ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

উঠলেন সিঙ্গাপুরের প্লেনে, নামলেন চট্টগ্রামে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
উঠলেন সিঙ্গাপুরের প্লেনে, নামলেন চট্টগ্রামে! প্রতারণার শিকার জুয়েল

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মো. জুয়েল (৩০) নামে এক যুবককে শ্রমিক ভিসায় সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেছে তারই আপন ফুফু ও ফুফাতো ভাই। তাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের কথা বলে একটি প্লেনে তুলে দেওয়া হয়।

পরে প্লেনটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে।

নিজ ফুফু এবং ফুফাতো ভাইয়ের হাতে তিনি এই ধরনের প্রতারণার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। এদিকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকরা। এ টাকা দিতে হয়েছে ধারদেনা করে।  

মো. জুয়েল লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বটগাছতলা এলাকার শহীজল মাঝির ছেলে।  

প্রতারকরা হলেন- শহীজল মাঝির আপন বোন ও জুয়েলের ফুফু আলেয়া বেগম, তার ছেলে আওলাদসহ আত্মীয় পরিচয়ের আরও চারজন। প্রতারক আয়েলা ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুদবা ইউনিয়নের কুদবা গ্রামের পল্লী পশু চিকিৎসক বশির আহমেদের স্ত্রী।  

এ ঘটনায় গত ৯ মে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি। এতে বোন আলেয়া বেগম, ভাগিনা আওলাদ হোসেন, আওলাদের শালা সানী, ভাগ্নি জামাই শামীম, ভাগিনা বৌ আয়েশাসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ দুলাল মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।  

জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি বলেন, ছেলে জুয়েলকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবে এমন আশ্বাস দিয়ে আমার বাড়িতে স্বজনসহ দীর্ঘদিন মেহমান হিসেবে অবস্থান করে বোন আলেয়া। এসময় অভিনব প্রতারণা করে আমার থেকে হাতিয়ে নেয় চার লাখ টাকা। পরে গত ২৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট সাজিয়ে জুয়েলকে বিমানে চড়িয়ে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  

তিনি আরও বলেন, জুয়েলকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার ভিসা বাবদ আমার বোন প্রথমে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে ৯ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। ৫ লাখ টাকা আমি পরিশোধ করবো। ভিসার বাকি টাকা আমার বোন আলেয়া নিজ থেকে পরিশোধ করবে বলে জানায়। এছাড়া আমার ভাগিনা আওলাদও তার প্রথম শ্বশুরের কাছ থেকে ভিসা নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঘটনার দুইদিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়। এজন্য দ্বিতীয় শ্বশুরবাড়ি থেকে চার লাখ টাকাও নেয়।  

শহীজলের ছোট ভাই মাহে আলম বলেন, আমার বোনের চাপাচাপিতে বড় ভাই শহীজল মাঝি ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এনজিও সংস্থা 'কোডেক' থেকে এক লাখ টাকা, তিন মেয়ের জামাইদের থেকে আড়াই লাখ এবং নিজের ৫০ হাজারসহ মোট চার লাখ টাকা জোগাড় করে। তাদের হাতে প্রতারিত হয়ে এখন ঋণের দায়ে হিমশিম খাচ্ছে।  

প্রতারণার শিকার জুয়েল বলেন, গত ২৮ এপ্রিল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দুই গেট অতিক্রম করার পরপরই আমার সঙ্গে ফুফাতো ভাই আওলাদের দেখা হয়। কিন্তু তার সিঙ্গাপুর থাকার কথা ছিল। তাকে দেখে আমার সন্দেহ জাগে। একপর্যায়ে সে আমাকে ভয় দেখিয়ে প্লেনে উঠতে বাধ্য করে। প্লেন ছেড়ে দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে। সেখান থেকে শামীম নামের এক ব্যক্তি আমাকে নিয়ে হোটেলে ওঠে। হোটেল কক্ষে নিয়ে আওলাদ ও শামীম মিলে আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায় এবং তাদের কথা মতো চলার নির্দেশ দেয়। আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফোন করে সিঙ্গাপুর পৌঁছেছে বলে আমার বাবার কাছে জানাতে বলে। এরপর তারা সিঙ্গাপুরের পরিচয়পত্রের জন্য আমার বাবার কাছে আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করে।

জুয়েল বলেন, সুযোগ পেয়ে আমি হোটেলের এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাড়িতে ফোন দিয়ে ঘটনাটি খুলে বলি। এর কিছুক্ষণ পর আওলাদ ও শামীম আমাকে সেখান থেকে বাসে করে ঢাকার সায়েদাবাদ নিয়ে এসে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আমি বাড়ি ফিরি। আমি পুরোপুরি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি তাদের বিচার চাই।  

মামলার পর থেকে প্রতারক আলেয়া বেগমসহ তার সহযোগীরা পলাতক থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।