ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

টিটিইকে ফাঁসানোর জন্যই যাত্রীকে দিয়ে অভিযোগ লেখান গার্ড 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
টিটিইকে ফাঁসানোর জন্যই যাত্রীকে দিয়ে অভিযোগ লেখান গার্ড 

পাবনা (ঈশ্বরদী): রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটের ট্রেন যাত্রীর সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে বরখাস্ত হওয়া ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের কোনো প্রমাণ তো মেলেনি এছাড়া সেদিন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

পূর্বের কোনো আক্রোশের জেরে ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) শরিফুল ইসলাম টিটিই শফিকুলকে ফাঁসানোর জন্য রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়দানকারী যাত্রীকে দিয়ে অভিযোগ লিখতে বাধ্য করেছিলেন। তবে সেদিন গার্ড শরিফুল ইসলাম ট্রেনে কোথাও দায়িত্ব পালন করেনি।  

সোমবার (১৬ মে) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল শেষে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা, তদন্ত কমিটির কার্যকরী সদস্য পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, শিপন আলী বাংলাননিউজকে এতথ্য জানান।  

তিনি বাংলানিউজকে আরও জানান, বিষয়টি ছিল আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের সঙ্গে টিটিই শফিকুলের অসদাচণের। যে কারণে শুধু সেই বিষয়েই তদন্ত করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিষয় আমরা তদন্তে নিয়ে আসিনি।

ওই ঘটনার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত করে জানা যায়, বুধবার (৪ মে) রাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ৭২৫ নাম্বার সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা তিনজন যাত্রীর সঙ্গে কোনো কথা কাটাকাটি হয়নি টিটিইর। কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি।  

ঈশ্বরদী হেডকোয়ার্টার্সের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম যাত্রীদের কাছে টাকা নিয়ে টিকিট দিয়েছেন। মূলত: ট্রেন পরিচালকের (গার্ড) সঙ্গে তার পূর্বের কোনো শত্রুতা ছিল। রেলওয়ে ট্রেনের যে পরিচালক শরিফুল ইসলাম তিনিই রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিটিক পরীক্ষক (টিটিই) শরিফুলকে ফাঁসানোর জন্য ট্রেনযাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তকে দিয়ে একটি চিঠি লিখেয়েছিলেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, মূল প্রতিবেদন সাত পৃষ্ঠার সঙ্গে আরও চল্লিশ পৃষ্ঠার তথ্য উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। অভিযোগকারী ট্রেনযাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তের তোলা অভিযোগ সঠিক ছিল না। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাকে রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ে এসে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৫ মে বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণরত তিন যাত্রীকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। পরে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও পাকশী রেল বিভাগ বরখাস্ত করা শফিকুল ইসলামকে স্বপদে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ১০ কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। শফিকুলকে বরখাস্তকারী ডিসিও নাসির উদ্দিনকে বিচার বিশ্লেষণ না করেই কেন এ সিদ্ধান্ত নেন, সেজন্য কারণ দর্শাতে শোকজ করা হয়। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শাতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে এ ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে শনিবার (৭ মে) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রোববার (৮ মে) নিজ ক্ষমতাবলে টিটিই শফিকুলের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদের বহালের নির্দেশ দেন ও পাকশীর ডিসিও নাসির উদ্দিনকে শোকজ করে সাতদিনে প্রতিবেদনটি দেওয়ার নির্দেশ দেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহীদুল ইসলাম। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটিকে আরও তিন কার্যদিবস বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার (১১ মে) তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন থাকলেও সরকারি কাজে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহীদুল ইসলাম ঢাকায় থাকার কারণে সোমবার (১৬ মে) ধার্য করা হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একজন দায়িত্বশীল রেল-কর্মচারী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। তদন্ত কমিটি পরিচ্ছন্নভাবে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে এনেছেন। তদন্তে দোষী ও অভিযুক্ত রেলওয়ের ট্রেন পরিচালক (গার্ড) শরিফুলের বিরুদ্ধে রেলওয়ের সুনাম নষ্ট করায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

প্রসঙ্গত, ৫ মে বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণরত তিন যাত্রীকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। পরে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও পাকশী রেল বিভাগ বখাস্ত করা শফিকুল ইসলামকে স্বপদে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ১০ কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। শফিকুলকে বরখাস্তকারী ডিসিও নাসির উদ্দিনকে বিচার বিশ্লেষণ না করেই কেন এ সিদ্ধান্ত নেন, সে কারণ দর্শাতে শোকজ করা হয়। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শাতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।