ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় এবং চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ সব শাখা নদীর পানি বাড়ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল।

মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্ট পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমাসহ সব কটি শাখা নদী ও হাওরের পানি বেড়েছে। এতে বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সকাল থেকে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে।  

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে ছাতক উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার তাহিরপুর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সম্প্রতি জেলায় ১৫টিরও বেশি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় তড়িঘড়ি করে ধান কেটে নিয়েছিলেন যেসব কৃষক, তারাও নতুন বিপদের সম্মুখীন। এছাড়া ভারতের আসামে বন্যা পরিস্থিতি এবং মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা আবহাওয়া অধিদপ্ততরের।

সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা তজু মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে শুরু করেছে। বাড়িঘর ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে এই এলাকার মানুষ।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বসতভিটা হারানো ছাত্তার আলী বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমার সব নিয়ে গেছে। আমার আর কিছুই বাকি থাকেনি। কাম কাজ করে টাকা জমিয়ে একটা ঘর করেছিলাম, কিন্তু আমার কষ্টের ঘরটাও পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমি একেবারে অসহায় হয়ে গেলাম। এরকম একটা ঘর কি আর আমি বানাতে পারবো? আমার তো এমন একটা ঘর করার মত ক্ষমতা আর নেই। এখন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আল্লাহের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানিয়েছেন, গত দুইদিনে নদ নদীগুলোতে পানির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের গজারিয়া নদীর রাবার ড্যামের পাম্প হাউজ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের সড়কের প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের মেঘালয়ে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।