ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুপেয় পানির সংকটে বন্যা কবলিতরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
সুপেয় পানির সংকটে বন্যা কবলিতরা

সিলেট: গ্রাম অথবা শহর; দুর্ভোগের ধরণ একই। কোথাও শুধু খাদ্য সংকট, কোথাও সুপেয় পানি ও খাবারের।

এ অবস্থায় অনেকেই মানবেতর দিন পার করছেন।

বন্যায় সিলেট নগরীর অর্ধেকাংশ নিমজ্জিত। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২’র অধীস্থ নগরের উপশহরের বিভিন্ন ব্লক, তেররতন, সুবহানীঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, চালিবন্দর, মাছিমপুর, ছড়ারপাড় এলাকা তলিয়ে আছে। উপশহরে অবস্থিত বিদ্যুতের সাব স্টেশনও গত ৫ দিন ধরে পানির নিচে। এলাকাগুলো তাই অন্ধকারে নিমজ্জিত।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-৩’র অধীনস্থ দক্ষিণ সুরমা এলাকাও বন্যা কবলিত। পানিতে তলিয়ে থাকায় এলাকাগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত। তাই স্থানীয় লোকজন সুপেয় পানির সঙ্কটে পড়েছেন। নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিটি করপোরেশনের পানি বিশুদ্ধকরণ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) প্লান্টও তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি আরও চারটি পাম্পও তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে এসব এলাকার জনগণও সুপেয় পানি পাচ্ছেন না।

সিলেটের অন্তত ১০টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্ধ্যা কবলিত। সুপেয় খাবার পানি সংগ্রহের একমাত্র ভরসা টিউবওয়েলও পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজন দূরদূরান্ত থেকে কলসি, হাড়ি-পাতিলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। এসব এলাকার গ্রামীণ জনপদে পানি ও খাবার সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন। নিত্যদিনের উপার্জনের সংসার চালানো লোকগুলো বন্যায় আটকে পড়ায় তাদের আয়-রোজগারে প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে রান্নার ব্যবস্থা নেই। শুকনো খাবারের পাশাপাশি তাদের রান্না করা খাবারও বেশি প্রয়োজন।

শহর এলাকায় খাবার সমস্যা না থাকলেও সুপেয় পানির সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরের বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বলছেন, গত পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। তার ওপর নেই পানি। খাবার বা টয়লেটের জন্য তারা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষজন বৃষ্টির পানি ছেঁকে পানের জন্য ধরে রাখছেন।

সিলেট নগরের কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিনের বাড়ির টিউবওয়েলটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি জমিয়েছিলেন। সেগুলো কাপড়ে ছেঁকে পাত্রে রাখছেন। এরপর সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করবেন বলে তিনি জানান।

ভোগান্তিতে পড়েছে নগরের শাহজালাল উপশহর, শেখঘাট, কলাপাড়া, সোনাপাড়া, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ার পার, চালিবন্দর কানিশাইল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

নগরের মণিপুরি রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সুনীল সিংহ বলেন, মঙ্গলবার (১৭ মে) থেকে আমরা পানিবন্দী। বিশুদ্ধ পানির অভাব। ময়লা পানি মাড়িয়ে পানের জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয়।

নগরের উপশহর ই-ব্লকের বাসিন্দারা জানান, এলাকায় গলা সমান পানি, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। মোটর তলিয়ে গেছে, তাই পানি তুলতে পারছেন না। কিছু কিছু জায়গায় মোটর ঠিক থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় পানি তোলা যাচ্ছে না। অন্তত দেড় ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে ট্যাংকি ভরে পানি মজুদ করা যেত। যারা কষ্ট করে ২-৩ লিটার পানি এনে দিচ্ছেন তাতে ৭-৮ জনের পরিবারের পানির অভাব মেটানো সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ময়লা পানি ঢুকেছে। সেটি চালু করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে। চারটি পাম্প বন্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় দুই হাজার লিটারের ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিসিক’র প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বন্যা কবলিতদের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রেও বিশুদ্ধ পানি থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট নগরের উপশহরে এসএমপির সহযোগীতায় ‘মানবিক টিম’ নামক সংগঠনের সদস্যরা বাসা-বাড়িতে বোতলজাত খাবার পানি সরবরাহ করছেন। সিসিকের ২২ নম্বর কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম ও তার সঙ্গীরা বোতলজাত পানি ভ্যানে করে বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করছেন। এছাড়া রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরাও নেমেছেন সেবা দিতে। তবে শহর কেন্দ্রীক এসব সেবা সীমাবদ্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের কাছে সেসব সেবা পৌঁছাচ্ছে না। ফলে খাদ্যের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন বন্যা কবলিত গ্রামীণ জনপদের লোকজন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ২০ মে, ২০২২
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad