ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্তের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২২
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্তের আহ্বান

ঢাকা: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন খাতে আগেও ১০টি সিন্ডিকেট ছিল। সে সময় এসব সিন্ডিকেট বন্ধ করেছিল মালয়শিয়ার সরকার।

তবে এই শ্রমবাজার নিয়ে আবারো ২৫টি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। পুনরায় যদি মালয়শিয়ার শ্রমবাজার এসব সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় তবে অভিবাসন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এসব সিন্ডিকেট কখনই দেশের কল্যাণ বা সুফল বয়ে আনবে না। সিন্ডিকেটের হাতে মালয়শিয়ার শ্রমবাজারের দায়িত্ব না দিয়ে নিবন্ধিত সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটন ঢাকার বলরুমে আয়োজিত বাংলাদেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উম্মুক্ত করণ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।

বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোটের উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তারা আরও বলেন, মালয়শিয়া সরকারের যে মন্ত্রী বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছেন যে- নির্ধারিত ২৫টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই সেদেশের শ্রমবাজারে অভিবাসন করা যাবে- নিশ্চয়ই তা বড় ধরনের চক্রান্ত। যারা এসব সিন্ডিকেট তৈরি করেছে তারা দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচারও করেছে। তারা কখনোই দেশের মঙ্গল বয়ে আনবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের পরামর্শও দেন তারা।

এদিকে অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৪০ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ৬-৭ বছর খোলা ছিল। প্রতিবারই দেখা যায় আগের নিয়ম ভুল ছিল, তারা আরও ভালো করতে চায়। ভালো করতে গিয়ে দেখা যায় আরও বেশি দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। মালয়েশিয়ায় যখনই নির্বাচন আসে তখনই বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার মাধ্যমে একটা ভালো ব্যবসা করার চেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবারও চুক্তি হল কর্মী পাঠানোর। আমরা আবার আশাবাদী হলাম। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে আবারও ঘুরে ফিরে সেই সিন্ডিকেটের আলোচনা। আমি জানি না পৃথিবীতে এমন কোনো ঘটনা আছে কিনা মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বলে যে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে লোক নেব না। এটা একটা অদ্ভূত ঘটনা। মালয়েশিয়া অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে কর্মী নেয় তার পুরো প্রক্রিয়া আলাদা।

বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার বলেন, যারা সিন্ডিকেট করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, জনশক্তির এই সেক্টর নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। এই সেক্টর ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। আজকে শ্রমিকদের স্বার্থে অভিবাসন খাতে যারা কাজ করি, তাদের স্বার্থে একটি অভিন্ন নীতি থাকা প্রয়োজন। এখানে কোটা ব্যবস্থা তৈরি করে এই সেক্টর ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তারা দেশের কল্যাণ কাজ করছে বলে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে চাই না।

সংগঠনের সদ্য সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যে অবস্থান তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন করতে চাই। বাংলাদেশ একটি বড় সোর্স কান্ট্রি। আমরা অনেক কিছু দেখি, অনেক কথা শুনি। মালয়েশিয়ার বাজারে এই ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট চালু না করলে বাজার হারানোর কথা বলা হচ্ছে। সত্য হচ্ছে মালয়েশিয়ায় কোনো দেশ থেকে কর্মী যাচ্ছে না। সেখানে আমাদের দেশের কর্মী ছাড়া মালয়েশিয়ার সামনে পথ নেই। মালয়েশিয়ায় আমাদের কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু মাঝখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই শ্রমবাজার নষ্ট করছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে যাতে কোনো চক্র এই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন সেকিল চৌধুরী বলেন, তার সংগঠন প্রবাসীদের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তা করে আসছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে যদি আমরা সুরক্ষা না দিতে পারি আমাদের অর্থনীতি কিন্তু বিপদজনক অবস্থায় চলে যাবে। আজকে রেমিট্যান্স না আসলে ডলারের দাম যেটা ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে সেটি ১৫০ টাকা হতো। এর পেছনে যারা কারিগর তারাই হচ্ছে এই রিক্রুটিং এজেন্সি। তাদের মাধ্যমে এদেশের মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। যার ফলে ২২-২৩ বিলিয়ন ডলার দেশে আসছে।

অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় ককার্সের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি মনে করি আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার জায়গা হচ্ছে বায়রা শক্তিশালী না। আপনারা প্রচুর মানুষ বিদেশে পাঠিয়েছেন, দেশের চালিকা শক্তিতে অবদান রেখেছেন, কিন্তু নিজেদের সংগঠনের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে পারেননি কখনো। আপনাদের নিজস্ব একটা উপলব্ধির সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।

বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী বলেন,  সিন্ডিকেট লাভ না লোকসান সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এই সিন্ডিকেট দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। এই সিন্ডিকেট দিয়ে দেশের কোনো লাভ নেই, সেক্টরে কোনো লাভ নেই।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট করার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, মালয়শিয়ায় শ্রমবাজারে মাইগ্রেশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর যথেষ্ট চাপ এসেছে। কারণ যারা এর মধ্যে আছে তারা খুব ক্ষমতাবান। তবে এই সেক্টরে কোনো সিন্ডিকেট থাকুক তা প্রধানমন্ত্রী চান না। প্রধানমন্ত্রী যদি সিন্ডিকেট চাইতেন, তবে অনেক আগেই হয়ে যেত। সেটা হয়নি। এ নিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে আমার নেই। উনি চান নাই বলেই এখন পর্যন্ত হয়নি, এটা আমি মনে করি।

বায়রার মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বায়রা'র সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম, শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।