ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ হয়নি সেতু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ হয়নি সেতু সেতুর লোহার কাঠামোয় মরিচা ধরেছে

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল-বেলকুচি সড়কে স্টেডিয়াম সংলগ্ন পশ্চিম আকুরটাকুরপাড়া লৌহজং নদীর ওপর নির্মাণ হতে যাওয়া সেতুর কাজের মেয়াদ শেষ। কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি।

কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শুরু হলেও শ্লথ গতির কারণে কাজ এখনও বাকি। ফলে সাধারণ জনগণকে পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক ভোগান্তি। সেতু না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করেই এপার-ওপার যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

লৌহজং নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতুটিতে ঢালাই না দেওয়ায় ব্যবহৃত রডে মরিচা পড়ে গেছে। এ ছাড়া সেতুতে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। পৌরসভার প্রকৌশলী জানিয়েছেন, দেড় বছরে সেতুটির মাত্র ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে!

মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ। কিন্তু ঠিকাদার জানিয়েছেন দ্রুত সময়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

টাঙ্গাইল শহরের সঙ্গে এ সেতুর মাধ্যমে পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড ও উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়ন সংযুক্ত। আগে বেইলি ব্রিজ ছিল সেখানে, যেটি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় দুই বছর আগে বেইলি সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু করে পৌরসভা।

নির্মাণের সময় প্রায় দুই মাস সেতু সংযুক্ত সড়ক বন্ধ ছিল। ফলে প্রায় এক কিলোমিটার ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে হতো জনসাধারণের। আগের সেতু দিয়ে ভারী যানবাহনও চলাচল করতো। এখন এসব যানবাহনগুলোও এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে। এতে মানুষ ও যানবাহনের চালক-হেলপার-যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে তিন কোটি ৯৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ টাকা ব্যয়ে লৌহজং নদীর উপর ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে টাঙ্গাইল পৌরসভা। পরে সেতু নির্মাণে আলিফ ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে কাজের অনুমতি দেয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। গত ১১ মে সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এসব তথ্য জানান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নদীর বুক থেকে সেতুর মাত্র চারটি পিলার উঠে এসেছে। এসব পিলারের ওপর স্ল্যাব বসাতে রডের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কাজ হয়নি। ফলে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে লোহার কাঠামো। পথচারীরা সেতুর উত্তর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছেন। ছোট যানবাহনের আরোহীরা দক্ষিণ পাশের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ব্যবহার করছেন। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে নির্মাণ সামগ্রী রাখা আছে।

সজিব নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, গত দুই বছর ধরে সেতুর কাজের কারণে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর পরিবর্তে বিকল্প সড়ক করা হলেও তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মিত সেতু চান বলে তিনি দাবি জানান।

তানজীদ আহমেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, বেশি লাভের আশায় ঠিকাদার সেতুতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় দেড় মাস যাবত ঢালাই করার জন্য রড লাগিয়ে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রডগুলোয় মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি মালামাল অপচয় ও পৌরবাসীর দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।

আরও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে স্থানীয়দের। এসব ব্যাপারে সেতুর কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রকৌশলী সাধন চন্দ্র ধরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। ঠিকাদার যদি কাজ না করে, সেক্ষেত্রে পৌর মেয়র তাকে ওয়ার্নিং দেওয়াসহ কাজ বাতিল করে দিতে পারেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, সেতুটি ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গত বছর বন্যার কারণে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও আরও তিন মাস বাড়ানো হবে। বাকি কাজ করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর কাজ শেষ দিতে ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ চিঠির মাধ্যমেও তাদের জানানো হয়েছে। অন্যথায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আলিফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এম আর খান টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, সেতুর কাজ শেষ করতে সময় লাগে। সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত প্লেট ও পাইপ চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে। এ সেতুটির কাজ ফ্লাইওভারের মতো। চায়না থেকেও নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে। এসব সামগ্রী সংযোগেও সময় লাগে। সেতুর ছাদ ঢালাই হলে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হবে। আগামী অক্টোবরের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ২২ মে, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।