ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভূমি সেবা সহজীকরণে আরও পদক্ষেপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
ভূমি সেবা সহজীকরণে আরও পদক্ষেপ

ঢাকা: ভূমি মন্ত্রণালয়ের নামজারি এবং খতিয়ানের ডাটাবেজ আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত নিবন্ধন অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে নামজারি আবেদনে থাকছে না বাড়তি দলিলাদি জমা দেওয়ার ঝামেলা।

এখন থেকে জমির যেসব ডকুমেন্ট সরকারের কাছে রয়েছে, এর কপি আর নাগরিককে নামজারি আবেদনের সময় জমা দিতে হবে না।  

এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান/পর্চা, জরিপ এবং জমির ম্যাপ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে। ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে ভূমি সেবা ডিজিটাইজেশনের বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকরভাবে স্থাপনে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২২ মে) ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'ভূমি অফিসে না এসে ভূমি সেবা গ্রহণ করুন’ প্রতিপাদ্যে গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০২২-এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত (রেকর্ডেড) শুভেচ্ছা বার্তা প্রদর্শন করা হয়। সেবা সপ্তাহটি আগামী ২৩ মে পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। রোববার (২২ মে) বাংলাদেশের আটটি বিভাগে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনাররা স্থানীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে ভূমি সেবা বিষয়ক মতবিনিময় ও সংবাদ সম্মেলন করেন। সারা দেশের ভূমি অফিসগুলো সেবা দেওয়ার জন্য সেবা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

নিবন্ধন ও নামজারি: ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিগগির ই-নামজারির জন্য আধুনিক ফরম চালু করা হবে। এ ফরম চালু হলে আবেদন করার সময় আবেদনে ত্রুটি আছে কিনা তা বোঝা যাবে। এছাড়া কল সেন্টারের মাধ্যমেও নামজারির আবেদন জমা দেওয়া যাবে। জমির যেসব ডকুমেন্ট সরকারের কাছে রয়েছে, এর কপি আর নাগরিককে নামজারি আবেদনের সময় জমা দিতে হবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিবন্ধন দলিল মূলেও নামজারি করা হবে। এতে জমি হস্তান্তরে নতুন করে নামজারির প্রয়োজন হবে না।

খতিয়ান বা পর্চা: এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটি ১৩ লাখ খতিয়ান ডিজিটাইজ করা হয়েছে। একটি খতিয়ান থেকে পরবর্তীতে কতটি খতিয়ান তৈরি হয়েছে তাও জানা যাবে ডিজিটাল সিস্টেম থেকে। এতে বোঝা যাবে মূল খতিয়ানের জমি এবং মূল খতিয়ানের অন্যান্য খতিয়ানের জমির পরিমাণের মধ্যে সামঞ্জস্যতা। এছাড়া খতিয়ান ডাটাবেজ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হলে একই জমি বারবার বিক্রি হওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ থাকবে না এবং জাল দলিল তৈরি রোধ হবে। এছাড়া কিউআর কোড দিয়েও দলিলের সঠিকতা এখন যাচাই করা যাচ্ছে।

জরিপ এবং ম্যাপ: ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব মৌজায় ডিজিটাল ও স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। গত ১২ মে মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের এক লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ডিজিটাইজ ম্যাপের সঙ্গে কেনা স্যাটেলাইট ভূমির ছবি সমন্বয় করা হবে। এ প্রকল্প কার্যকর হলে কার্যকর ডিজিটাল ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ তৈরি হবে। এক ক্লিকেই দেখা যাবে জমির শ্রেণি কি এবং জমির মালিককে।

ভূমি উন্নয়ন কর: আড়াই কোটি হোল্ডিং ডিজিটাইজ করা হয়েছে, বাকিগুলোও খুব দ্রুত শেষ হবে। মানুষ এখন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে না গিয়েই ভূমি কর দিতে পারছেন। বর্তমানে এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে কিংবা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া- দুই ভাবেই ভূমি কর জমা দেওয়া যাচ্ছে। এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সরাসরি ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মূল ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থায় জমির মালিকের প্রোফাইলে না ঢুকেই জমির মালিকের নিবন্ধিত ও হোল্ডিং এন্ট্রি সম্পন্ন করা জমির ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া যাবে। যে কোনো ব্যক্তি ভূমি উন্নয়ন কর অপরের পক্ষেও দিতে পারবেন।

এই ব্যবস্থা কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য সুবিধাজনক হবে। তবে সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দাখিলা যেন কেবল জমির মূল মালিক গ্রহণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে। ভূমি উন্নয়ন করের সঙ্গে সঙ্গে দাখিলা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি ৮ লাখ সুবিধাভোগী অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে নিবন্ধন করেছেন। তিন কোটি জমির তথ্য এরই মধ্যে ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক স্বচ্ছভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন। অন্তত ৫০ শতাংশ নাগরিকের হয়রানি কমেছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে।

সার্বিক ব্যবস্থাপনা: আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সারাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা সয়ংক্রিয় করতে নেওয়া হয়েছে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প’। ভূমি মালিকানা প্রমাণের জন্য উপযুক্ত অনেকগুলো দলিলাদির বদলে একটি ‘ভূমি মালিকানা সনদ’ তথা ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আইন ও বিধি-বিধান: ভূমি সংস্কার আইন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন এবং হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন এবং ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় আইন খুব শিগগির মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

ভূমি রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের উদ্দেশ্য সব অভ্যন্তরীণ মামলা (মিস কেস, রিভিউ ও রেন্ট সার্টিফিকেট) একই প্ল্যাটফর্মে পরিচালনা করা, অনলাইনে মামলার অবস্থা মনিটরিং সুপারভাইজ করা, দেওয়ানি মামলা ব্যবস্থাপনা ও একটি পরিপূর্ণ ডাটাবেজ তৈরি ইত্যাদি।

এছাড়া ভূমিসেবা কিয়স্ক বিভিন্ন জনবহুল এলাকা যেমন স্টেশন, বিপণী-বিতান, উপজেলা অফিস কমপ্লেক্স ইত্যাদি জায়গায় স্থাপন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাগরিকরা প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে জমির খতিয়ান, জমির ম্যাপ প্রিন্ট করতে পারবেন। দিতে পারবেন ভূমি উন্নয়ন কর। এছাড়া জানা যাবে নামজারি আবেদনের আপডেট।

প্রসঙ্গত, প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং সার্বিকভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল হলে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ও আমূল পরিবর্তন হবে এবং দক্ষ ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad