ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় সংঘর্ষ: বিএনপির ৮শ’ নেতাকর্মীর নামে মামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
খুলনায় সংঘর্ষ: বিএনপির ৮শ’ নেতাকর্মীর নামে মামলা

খুলনা: খুলনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৯২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত-আটশ’ নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দিবাগত রাতে খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ কুমার বোস বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের করা মামলায় বিএনপি নেতা শফিকুর আলম তুহিনকে প্রধান আসামি করে ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭/৮শ’ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে খুলনা থানাধীন ৬ নং কে ডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি চলছিল। সমাবেশে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও ঔদ্বত্যপূর্ণ মন্তব্য করার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে বিকেল চারটার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি চলছিল। এই বিক্ষোভ মিছিলে আড়াই থেকে তিন হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের দাবি, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ খুলনা জেলা শাখার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডাক বাংলো মোড় থেকে ঘুরে ফের দলীয় কার্যালয়ে ফেরার সময় বিক্ষোভ মিছিলটি খুলনা থানাধীন পিকচার প্যালেস মোড় অতিক্রম করলে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইট-পাটকেলসহ খুলনা জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।

এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে খুলনা থানাধীন পিকচার প্যালেস মোড় থেকে বিএনপি অফিস পর্যন্ত এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা উভয় পক্ষকে নিভৃত করার চেষ্টাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর চরম মারমুখী হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে ঘটনাস্থলে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং শর্টগানের গুলিবর্ষণ করা হয়।

এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট সময় ধরে চলা বিএনপি নেতাকর্মীদের তাণ্ডব ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্য্য ও পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৪ জন পুলিশ সদস্য জখম হন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি অস্ত্র-গুলি ও জানমাল রক্ষার্থে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র থেকে ১২৭ রাউন্ড শর্টগান, ৪৩ রাউন্ড গ্যাসগান ফায়ার করেন। এ ঘটনায় ডিউটিতে নিয়োজিত ১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৭ জন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। ঘটনায় খুলনা সদর থানায়  একটি মামলা হয়। মামলা নং-৩১।

তবে পুলিশের এসব বক্তব্যের উল্টো বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, খুলনায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালালে বিএনপির অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের তাণ্ডবলীলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা মহানগর। পুলিশ বিএনপি অফিসের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং দলীয় কার্যালয় এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, নগর মহিলা দলের সভাপতি আজিজা খানম এলিজাসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে মহানগরের কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আগেই খুলনায় পৌঁছান। সমাবেশে যোগ দিতে ছাত্রদলের জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন।

একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মিছিল বের করেন মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন।

পিকচার প্যালেস মোড়ে তাদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। হামলা ভাঙচুর ও সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে। থেমে থেমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, সমাবেশে অংশ নিতে বিকেলে তেরখাদা উপজেলা থেকে বিএনপির একটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসার সময় কেসিসি সুপার মার্কেটের সামনে মিছিলে বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে।

এ খবর কেডি ঘোষ রোডে সমাবেশস্থলে পৌঁছালে বিএনপির বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হয়। পুলিশ বাধা দিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ পাল্টা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষে খুলনা রণক্ষেত্র, আহত ২০

বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।