ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু চালু হলে শান্তি, আয় বাড়বে বাস-স্পিডবোটে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
পদ্মা সেতু চালু হলে শান্তি, আয় বাড়বে বাস-স্পিডবোটে ছবি: ডিএইচ বাদল

পদ্মা সেতু এলাকা থেকে ফিরে: উদ্বোধনের জন্য প্রায় প্রস্তুত স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’। আগামী ২৫ জুন দেশের কোটি মানুষের কাঙ্ক্ষিত এ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে প্রমত্তা পদ্মার ওপর নির্মিত এ সেতুটি।

ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যাতায়াত হবে আরো সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। এ সেতুর ফলে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও নড়াইলের সঙ্গে ঢাকার যাত্রাপথে সময় লাগবে ৭০ থেকে ৮০ মিনিট। আর এ কারণেই নতুন স্বপ্নের আশায় বুক বাঁধছেন লাখো মানুষ।

এ পদ্মাকে ঘিরে যাদের কর্মজীবন তাদের একটি বড় অংশ পরিবহন শ্রমিকরা। ফেরি পারের তুলনায় সেতু হলে তাদের জীবিকাতেও এর একটি বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে সেই প্রভাব তাদের জীবনে আনবে সুখকর দিক, আনবে শান্তি। বুধবার (১ জুন) বিকেলে মাওয়া পাড়ে বাংলানিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে ডিএম পরিবহনের সুপারভাইজার মো. তামিম বলেন, কোম্পানি থাকবে কিন্তু কোম্পানির নিয়ম-কানুন পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখন যেভাবে চলছে, সেটিও চেঞ্জ হয়ে যাবে। এখন যেমন ঢাকা-মাওয়া চলছে, ঠিক তেমনি সেতু চালু হলে তখন ঢাকা-শরীয়তপুর, ঢাকা-মাদারীপুর চলবে।

তিনি আরও বলেন, সেতু চালু হলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা এখনকার তুলনায় তখন বেশি হবে। সার্ভিস আরও ভালো হবে, এসব গাড়ি তো আর থাকবে না, তখনই ভালো হবে। বাড়িঘর যেতে পারবো কম, কিন্তু সুবিধা হবে বেশি। এখন তো ডিউটি শেষে বাড়িতে যাই, তখন সেটা না পারলেও অন্যান্য সুবিধা আর আয় বেশি থাকবে।

দোয়েল পরিবহনের সুপারভাইজার মো. রাজু বলেন, এখন টিকিট ছাড়া ডেকে ডেকে যাত্রী উঠাতে হয়। সেতু হয়ে গেলে এটা তো আর থাকবে না। তখন সবাই টিকিট কেটেই গাড়িতে উঠবে। তখন বাসের কাউন্টার থাকবে, এটাই বড় শান্তি। যাত্রী নিয়ে এক কোম্পানির লোকের সঙ্গে অন্য কোম্পানির লোকের কোনো পীড়াপিড়ি নেই, মারামারি নেই, যার যার যাত্রী তার তার। এক লাইনে ৩/৪টা পরিবহন চলে, যার সার্ভিস ভালো হবে, যাত্রীরা তারটাই সেবা নেবে।  

তিনি আরও বলেন, এখন গাড়ি চলাচলে কিছুটা অনিয়মও আছে। রাতের গাড়ি দিনে চলে আবার দিনের গাড়ি রাতে চলে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে গেলে এগুলো তো আর থাকবে না, সব একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে। আর সেতু হলে বাসে তখন যাত্রীও বাড়বে। সেতুতে টোল খরচসহ খুব বেশি হলে ৫০ টাকা ভাড়া বাড়বে। এ ৫০ টাকার জন্য কেউ ফেরিতে জ্যামসহ ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে চাইবে না। তাই সেতু হলে আমাদের সুবিধাই।

এদিকে স্পিডবোট মালিকরা বলছেন, সেতু চালু হলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পেশার জন্য তারা স্পিডবোটের ব্যবস্থা বা অন্যকিছু ভাববেন। তবে আপাতত এখনও সেভাবে কিছু ভাবা হয়নি। তবে ভালো কিছু হবে বলেই প্রত্যাশা ইলিয়াস, সাহজাহান, আলতাফ, সেলিমসহ অন্যান্য স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিকদের। এছাড়া সেতু চালু হলে পর্যটন এরিয়া হিসেবে এ খাতে আয় বাড়বে বলেও প্রত্যাশা অনেকের।

পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য যা দরকার, এর প্রায় সব কাজই সম্পন্ন হওয়ার পথে। এখন যেসব কাজ চলমান আছে, এর বেশির ভাগই যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই। তবে বাকি টুকটাক কাজ আগামী ১৫ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেতুতে টুকিটাকি কাজ চলছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হবে। আগামী ২৫ জুন সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে যত ধরনের প্রস্তুতি দরকার, তার সবই নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।