ঢাকা, সোমবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ জুন ২০২৪, ১৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হচ্ছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হচ্ছে’ বক্তব্য রাখছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম -বাংলানিউজ

সিলেট: স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাসের। দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নয়, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হচ্ছে।

কেউ কেউ বাংলাদেশ-ভারতের এই সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসড়ক যোগাযোগসহ বাণিজ্যিক লেনদেনে খুলছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। ঐতিহাসিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের উন্নয়নের ভারতের অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

শনিবার (১১ জুন) দুপুরে সিলেটে ধোপাদিঘীর পাড় ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজের উদ্বোধনকালে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দ্বেরাইস্বামী, সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট নগরের ধোপাদিঘীর পাড় উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন; ক্লিনার্স কলোনি ও চারাদিঘীর পাড়ে স্কুল ভবন নির্মাণ ভারত সরকারের অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছে।

এসময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি চাইলেই প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবেন না। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করতেন। এই শিক্ষা হাদিসেও আছে। আদিকাল থেকে আমাদের মধ্যে চলে আসছে।

তিনি বলেন, আগে অভাব ছিল, কিন্তু সম্পর্কের সহাবস্থানের কারণে আমরা ভাল ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত; মাঝে মাঝে কিছু লোক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে। তাই আমাদের সচেতন থাকার দরকার, যাতে এ ধরনের লোক আমাদের দেশকে শেষ করে দিতে না পারে।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নত বিশ্বের দিকে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভারতের সঙ্গে বড় বড় কয়েকটি কাজ হয়েছে। বিশেষ করে সিটমহলে বিরোধপূর্ণ ভূমি থেকে ভারত পেয়েছে ৭ হাজার একর, বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭ হাজার একর। এখানে ভারত বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে। এটা ভারত-বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য প্রতিবেশী। এটা পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তারপরও বলব, দেনা-পাওনাটা বড় নয়, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা সুন্দর, আত্মবিশ্বাসের। ৭১ সালে তারা আমাদের উপকার করেছে। রাশিয়া আমাদের পাশে ছিল। তাই বলে, তার উপকার করতে না পারি শত্রুতা করব কেন? আমরা তাদের কৃতজ্ঞতাবোধের কথা ভুলে যাব কেন? তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নেতিবাচক হিসেবে দেখা দুর্ভাগ্যজনক।  

এসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের স্মৃতিচারণ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, তিনি (মুহিত) প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্থ, ন্যায়নিষ্ট, সৎ ও আদর্শবাদ মানুষ ছিলেন। তিনি দেশের জন্য অনেক শ্রম দিয়েছেন। যে কারণে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড মিলে ইন্টারস্ট্যাট হাইওয়ে হচ্ছে। সেই হাইওয়েতে বাংলাদেশও সম্পৃক্ত হচ্ছে। সেই রোডটি হবে ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-থাইল্যান্ড। আমরা ভারতের কাছে দরখাস্ত করেছি, আমাদের যুক্ত করতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেটা গ্রহণ করেছেন। সিলেটের তামাবিল এই রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হবে। এরই মধ্যে ওইপাশে ভারত ৪ লেন সড়ক করে ফেলেছে। আমরাও সড়ক সম্প্রসারণ করব। এটি বাস্তবায়ন হলে দু’দেশের বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচন হবে।

তিনি বলেন, আমরা সিলেটে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করছি। এটা হলে পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষও সুবিধা নিতে পারবেন। তিনি সিলেট পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থলে উদ্যান করা এবং বঙ্গবন্ধু সেলকে জাদুঘরে রূপান্তরের কথা তুলে ধরেন।

এছাড়া ব্রিটিশ আমলে দেশের মধ্যে একমাত্র নারী করিমুন্নেছার ফাঁসি হয় এই কারাগারে। সেই ফাঁসির কাস্টটিও সংরক্ষণ করা হবে। সেই সঙ্গে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকেও পার্ক বা উদ্যান তৈরির দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের পথ ধরে দু-দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দ্বেরাই স্বামী।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য দেন সিলেটি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

এসময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায়, ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ধোপাদিঘীর পাড় উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন এলাকা ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এরপর তারা নগরের হাফিজ কমপ্লেক্সে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিতের চেহলাম অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এনইউ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।