ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোরবানির জন্য গরু-ছাগলে উদ্বৃত্ত রাজশাহী, তবুও শঙ্কা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
কোরবানির জন্য গরু-ছাগলে উদ্বৃত্ত রাজশাহী, তবুও শঙ্কা

রাজশাহী: গবাদি পশু পালনে সাফল্যের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে রাজশাহী। গো-খাদ্যের বাজার চড়া থাকায় বেড়েছে গবাদি পশু লালন-পালন করার খরচ।

এর সঙ্গে রয়েছে গরম আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জসহ আরও নানান প্রতিকূলতা। এরপরও গবাদি পশু পালনে সফলতা দেখিয়েছে ‘রাজশাহী’। দেশের মধ্যে কোরবানির জন্য এবার সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে- বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। এছাড়া চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে- কোরবানির গরুও।

সব মিলেয়ে যেই পরিমাণ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে- তা দিয়ে এই ঈদুল আজহায় রাজশাহীর কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভারত থেকে এবারও গরু আমদানি করার প্রয়োজন নেই।

টানা দুই বছর করোনা মহামারি কাটিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চান এই অঞ্চলের খামারিরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে তাই এবার পর্যাপ্ত পশু লালন-পালন করেছেন। ক্ষতিকর কোনো পদ্ধতি ছাড়াই প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শে দেশি উপায়ে কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে- নানান চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও রাজশাহী পশু পালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে নিরবেই। এই অবস্থা করোনার দুই বছর আগেও ছিল না। এটি রাজশাহীর একটি অনন্য সাফল্য। বর্তমানে দেশের মধ্যে কোরবানির জন্য সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে রাজশাহীতে। এছাড়া কোরবানির জন্য চাহিদার চেয়েও গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে রাজশাহীর আট জেলায় এক লাখ ৩০ হাজার ২৬৫ জন খামারি রয়েছেন। জেলাগুলো হচ্ছে- রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট। বর্তমানে এসব জেলার খামারিদের কাছে কোরবানির জন্য ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬৩৯টি ছাগল রয়েছে। ভেড়া রয়েছে চার লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭টি। আর ছাগলের মত ভেড়ার সংখ্যাও বেশি। এছাড়া গরু রয়েছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯টি। মহিষ ২১ হাজার ৫২১টি।  

আর রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে- এখানে কোরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২টি। জেলায় এবার সম্ভাব্য চাহিদা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার গরু বেশি রয়েছে। রাজশাহী জেলার নয় উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারি রয়েছেন। তাদের কাছে কোরবানির জন্য ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫টি ভেড়া আছে। এছাড়া মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ২১১টি। যা চাহিদার তুলনায় বেশি।

এদিকে, বছর ঘুরে আবারও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির মৌসুম কেবলই শুরু হতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে- জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার হাটগুলোতে কোরবানির পশু আসতে শুরু করবে। জুলাইয়ের প্রথমেই কোরবানির হাট জমজমাট হয়ে উঠবে। রাজশাহীর মহানগরীর ‘সিটিহাট’ ছাড়াও, উপকণ্ঠে থাকা পবার নওহাটা, দামকুড়া, কাঁটাখালীতে হাট রয়েছে। এছাড়াও জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাট, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট ও মহিষালবাড়ি হাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর হাট, দুর্গাপুর হাট, মোহনপুরের কেশরহাট ও সাবাইহাট, তানোরের চৌবাড়িয়া ও মুণ্ডুমালা হাট উল্লেখযোগ্য। সিটিহাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা প্রশাসন। আর উপজেলার হাটগুলো দেখে জেলা প্রশাসন।

গেল দু’বছরের মত এবার করোনা সংকট না থাকায় রাজশাহী জেলা ও আশপাশের পশুহাটগুলো একদম দেশি গরুতেই জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই দেশি গরুর খামারিরা করোনার লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। বাজার পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে পশুর হাটে গিয়ে ভালো দাম পাবেন- রাজশাহী অঞ্চলের খামারিরা।

তবে করেনা সংকট না থাকলেও দেশে এখন নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তাই পশুর হাট মন্দা যাওয়ার আশঙ্কাও ভর করেছে স্থানীয় খামারিদের মাথায়। আর বাজার মন্দা হলে বছর ধরে লালন-পালন করা গবাদি পশুর ভালো দাম মিলবে না। কারো কারো পশু অবিক্রিতও থেকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

স্থানীয় গরুর খামিরা বলছেন- বাজারে গো-খাদ্যের দাম চড়া। বাধ্য হয়ে তাই বেশি দামে খাবার কিনে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে পশু পালনের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় হাটে বেশি দাম না পেলে লোকসান হবে তাদের।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের গরুর খামারি আলী হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন- করোনা নেই এই কথা ঠিক। তবে নিত্যপণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। সাধারণ মানুষ অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই অবস্থায় ঈদুল আজহা সমাগত। তাই অর্থাভাবে অনেকেই হয়তো এবার কোরবানিই দিতে পারবেন না। আর এমনটি হলে পশুর হাটে মন্দাভাব দেখা দেবে। কারণ খামারিরা প্রায় দ্বিগুণ খরচে কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন। এ অবস্থায় গরু বিক্রির জন্য ক্রেতা না পেলে তারা ক্ষতি করে গত বারের মত কম দামে পশু বিক্রি করতে পারবেন না। এতে পশু অবিক্রিত থেকে যেতে পোরে। তাই হাট জমলে ভালো। না হলেও পুঁজি হারানোর শঙ্কাও রয়েছে।

রাজশাহীর পারীলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, যতদিন যাচ্ছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। আগে মাসে একটি গরুর জন্য ২/৩ হাজার টাকা খরচ করলেই হতো। কিন্তু এখন ৬/৭ হাজার টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। তাই এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হবে। এ অবস্থায় হাটে ক্রেতা হলে তারা লাভের মুখ দেখবে। না হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, করোনা অতিমারীর কারণে গেল দুই বছর রাজশাহীর খামারিদের অনেক লোকসান হয়েছে। এরপরও তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। এ কারণে নানান সংকট মোকাবিলা করে কোরবানির জন্য পশু লালন-পালন করেছেন। এবার মোট চাহিদার চেয়েও প্রায় ১০ হাজার গরু বেশি রয়েছে। ফলে দেশি গরু দিয়েই এবার কোরবানির চাহিদা পূরণ সম্ভব। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে খামারিরা স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হয়েছে বলে এগুলো অনেক বেশি নিরাপদ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, করোনা না থাকায় এবার ভালো দাম পাবেন বলেও আশা করছেন। তবে বাজার মন্দার বিষয়টাও সবাইকে ভাবাচ্ছে। এরপরও হাটে কেনাবেচা জমে উঠলে খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। তবে গবাদি পশু লালন-পালনে খরচ বাড়ায় এবার কোরবানির পশুর দামও কিছুটা বেশি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
এসএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।