ঢাকা, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

স্বপ্নের পদ্মা সেতু: পরিবহন খাতে সোনালি সম্ভাবনার হাতছানি

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
স্বপ্নের পদ্মা সেতু: পরিবহন খাতে সোনালি সম্ভাবনার হাতছানি

ফরিদপুর: পদ্মা সেতু ঘিরে ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হতে যাচ্ছে। এর ফলে পরিবহন খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগের সম্ভবনা দেখছেন পরিবহন সেক্টরের মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১টি জেলার মানুষের সরাসরি যাতায়াত শরু হবে। আর তাদের আরামদায়ক যাত্রা উপহার দিতে সড়কে অত্যাধুনিক বাস চালু হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ফরিদপুরবাসীর মুখে। এছাড়া ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া জেলার পরিবহন ব্যবসায়ীরাও এমনটাই মনে করছেন। সেতু চালু হলেই জেলাগুলোর পরিবহন খাতের ব্যাবসায়ীক দ্বার খুলে যাবে। ভাগ্য পরিববর্তন হবে শত শত মালিক ও শ্রমিকদের।

পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিলাসবহুল বাসগুলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, খুলনা ও যশোর রুটেই বেশি চলাচল করলে উল্লেখিত জেলার ব্যবসায়ীরা খুব আরামদায়ক, অল্প সময়ে ও কম খরচে যাতায়াতের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। তাই পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের জেলায় বিলাসবহুল বাসগুলো চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইতোমধ্যে দেশের বুকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোম্পানি স্ক্যানিয়া, হুন্দাই ভলভো, অশোক লেল্যান্ড, আইচার, টাটা ও আইচারের মতো কোম্পানির চেসিস কিনে বাসের বডি তৈরির কাজ শুরু করছেন বাস মালিকরা।

ফরিদপুরের শ্রমিক নেতা মো. জুবায়ের জাকির এবং ফরিদপুর মটর ওয়াকার্স শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. নাসির বলেন, পরিবহন খাতে এবার কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে শুধু শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরাই ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন।

এ ধরনের বিনিয়োগের জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরাসহ অন্যান্য জেলার পরিবহন মালিকরাও। তাদের মধ্যে পদ্মাসেতু খুলে দেওয়া যেন ঈদের মতো আনন্দ বিরাজ করছে। এছাড়া যাত্রীরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আরামে যাতায়াত করতে পারবেন বলে তাদেরও আনন্দের শেষ নেই।

এদিকে, ঢাকা থেকে গ্রীন লাইন কোম্পানি বরগুনা-পটুয়াখালীর কলাপাড়া পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন কোম্পানিও চিন্তা করছে ফরিদপুর থেকে সরসরি চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে পরিবহন চালু করার। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সিনিয়র সমন্বয়কারী মো. বাচ্চু মিয়া।

অপরদিকে, আরও কয়েকটি কোম্পানি ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এসি ও নন-এসি, চেয়ারকোচ ও স্লিপার বাসগুলো বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটায় যাতায়াত করবে বলে শোনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশে অর্থনৈতির একটা মহা বিপ্লব ঘটবে।

সেতু চালু হলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে চলাচল শুরু করবে। ফলে পরিবহন সেক্টর দেশের প্রধান স্বর্ণময় অবস্থান হয়ে উঠবে। নতুন বাস নামলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে কমবে বেকারত্বও। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ভাড়া কম লাগবে বলে পণ্যের দামও কমবে। এতে পদ্মা সেতুর সুফল পাবে পুরো দেশবাসী।

দেশের স্বনামধন্য এনআর শ্যামলী ট্রাভেলসের এমডি শুভংকর ঘোষ রাকেশ বলেন, পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়বে। দূরত্ব কমবে, সময় বাঁচবে। তবে এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি আরও জানান, বড় ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা একসঙ্গে বিনিয়োগ করার বিষয়টি এখনো সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। তবে যারা ব্যাংকের সহযোগিতা যত তাড়াতাড়ি পাবেন, তারাই আগে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তারপরেও যেহেতু নৌপথ অব্যহত থাকবে ও রেল সুবিধা বাড়বে, তাই সবাই ভেবেচিন্তে সড়ক পথে বিলাসবহুল বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও অপেক্ষার পালা শেষ হবে সেটাই বড় স্বস্তি ও আনন্দের বিষয়।

ফরিদপুরের শ্রমিক নেতা মান্নান হাওলাদার বলেন, সেতু চালু হলে পথের দূরত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাসের ভাড়াও কমবে। বিভিন্ন কোম্পানির ৫০০ থেকে ৬০০ নতুন বাস ২১টি জেলায়সহ ঢাকা-কলকাতা রুটেও চালাবে বলে মনে করেন তিনি।

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মে. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু খুলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমে যাবে। এতে পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে সুফল ভোগ করবে জনগণ। প্রাথমিকভাবে সড়ক পরিবহন খাতে ১৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। সড়ক যোগাযোগে শৃঙ্খলা ফিরলে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং ব্যাপক প্রসারও ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।