খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামটির জরাজীর্ণ অবস্থা। সংস্কারের অভাবে গোটা স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেঙে ভেঙে পড়ছে।
১৯৯৭ সালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ১১ একর জায়গার ওপর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করে দেয়। উদ্বোধন হয় পরের বছর। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কল্প রঞ্জন চাকমা সেটির উদ্বোধন করেছিলেন ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসা শান্তিবাহিনী সদস্যদের অস্ত্র সমর্পণ হয়েছিল ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এই স্টেডিয়ামেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন সন্তু লারমাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। সে কারণে ঐতিহাসিক মর্যাদা পাওয়া এই স্টেডিয়ামটির এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। ফুটবল খেলা গেলেও অপরিকল্পিত ডিজাইনের কারণে পাশের পরিধি কম হওয়ায় জাতীয় মানের ক্রিকেট খেলা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাউন্ডও মানসম্মত নয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় অধিকাংশ সময়ই খেলাধুলা ও প্রাকটিস বন্ধ থাকে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা ধুমকেতু মারমা বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে অফিস ভবন, মাঠ, প্যাভিলিয়ন কোন কিছুই সংস্কার হয়নি। বৃষ্টি হলে মাঠ থেকে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। জেলার ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে সরকারসহ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্যালারির। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এটির গ্যালারির পেলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্যালারিতে রঙের ছোঁয়া লাগেনি নির্মাণের এত বছরেও। ফলে গ্যালারির চারদিকে আগাছায় ছেয়ে গেছে। প্যাভিলিয়নের অবস্থাও নাজুক। অফিস কক্ষটির সংস্কার নেই বছরের পর বছর ধরে। খেলোয়াড়দের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। সাবেক খেলোয়াড় নজরুল ইসলাম ও মুজাহিদ বাবু বলেন, এই জেলার ছেলেমেয়েরা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন করছে। দেশের জন্য একের পর এক সফলতা নিয়ে আসছে। অথছ যেখানে তারা অনুশীলন করে সেই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামের অবস্থা অনেক করুণ। স্টেডিয়ামের পিলারগুলোর রেড বেরিয়ে আসছে। পেরেস্তারা খসে পড়ছে। গ্যালারি বসার অনুপযোগী। এমনিতেই জাতীয় মানের নয় খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটিকে জাতীয় পর্যায়ের করে গড়ে তুলতে একটি পুর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। স্টেডিয়ামটির সংস্কার ও উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জেলা প্রশাসকের।
খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে। তবে এটির বর্তমান অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তাছাড়া জাতীয়মানের স্টেডিয়াম না। যদি জাতীয়মানের স্টেডিয়াম করা যায় তাহলে স্থানীয় পর্যটন এলাকা কাজে লাগিয়ে এখানে জাতীয়-আন্তর্জাতিক খেলাগুলো অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। এই বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমরা ইতোমধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে স্টেডিয়ামটি সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানো করেছি। আশা করি, সহসা এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে। একি সঙ্গে স্টেডিয়ামটি যারা নির্মাণ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকেও আমি বলেছি যাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।
ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামটি নতুন রূপে সাজানো হলে পাহাড়ি এই জেলার খেলার মান আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ক্রীড়ানুরাগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
এডি/এএটি