ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মাওয়ার হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবার সংকট, অতিরিক্ত দাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
মাওয়ার হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবার সংকট, অতিরিক্ত দাম

ঢাকা : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জনগণের জন্য উদ্বোধন হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। উদ্বোধনের পর পদ্মার পাড়ে নেমেছে হাজারো মানুষের ঢল।

নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে কেউ পায়ে হেটে কেউবা মোটরসাইকেলে করে জড়ো হচ্ছেন সেতুর মাওয়া প্রান্তে। কমতি নেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের।

এর মধ্যেই মাওয়া ঘাটের আশপাশের খাবার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। তা ছাড়া রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্য। এতে যেমন বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ জনগণ। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খাবার প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীরা। শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সরজমিনে গিয়ে দুপুরে ঘাটের অর্ধশতাধিক খাবারের দোকানের বেশ কয়েকটিকে খোলা দেখা গেছে। শুক্রবার (২৪ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। শনিবার দুপুরের পর কয়েকটি খাবার হোটেল খোলা হয়।

মালিকরা বলেন, হোটেল খুলতেই মানুষের উপচে-পড়া ভিড় পড়ে। অনেক হোটেলে খাবারের আয়োজন না করতেই টেবিলে বসে পড়েন সেতু দর্শনার্থীরা। মালিক-কর্মচারীরা দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করলেও ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সংকট দেখা দেয়। এতে করে শুধু ভাজা মাছ দিয়েই কাস্টমারদের খাবার পরিবেশন করতে হয়েছে।

কিছু হোটেলে খাবারের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন বহু দর্শনার্থী। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালের সাক্ষী হতে তারা পদ্মা সেতু দেখতে এসেছিলেন সেলফি তুলবেন বলে। খাবার খেতে গিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় উপচে পড়া ভিড় পেয়েছেন। কোনো কোনো হোটেলে বসার জায়গা থাকলেও খাবার নেই। কেউ কেউ শুধু ইলিশ ভাজা দিয়েই দুপুরে খাবার খেয়েছেন।

সিরাজদিখান থানা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছে বাবুল শেখ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুতে ওঠার। আজ সে স্বপ্ন পূরণ না হলেও দেখতে পেরেছি। সেজন্য আমরা মহাখুশি। তবে সকালে আসছি দুপুরের খাবার হোটেলে খেতে এসে পড়েছি বিড়ম্বনায়। খাবারের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর ঠিকমতো খাবারও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি হোটেল ঘুরে অবশেষে এক হোটেলে খাবার খেলাম ডাবল দাম দিয়ে।

ভাই ভাই মোল্লা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক এমদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুপুর ২টায় হোটেল খুলেছি। এতো লোক হবে ভাবতে পারিনি। আমরা এতো লোকের আয়োজন করিনি। ফলে এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের ভর্তা, ভাজি, ডাল শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে। আমরা সকালে ঘাট থেকে মাছ কিনতে পারিনি। লৌহজং বাজার থেকে মাছসহ সবজি কিনে আনতে হয়েছে, দামও বেশি পড়েছে। ফলে আজকে একটু দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।

মা বাবার দোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে মো. ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো; আজ আনন্দের দিন। সেতু দেখতে হাজার হাজার লোক এসেছে। আমার হোটেলেও আজ অনেক ভিড়। বসার জায়গা দিতে পারছি না। গত ২ ঘণ্টায় তিনবার রান্না করতে হয়েছে। মানুষের অতিরিক্ত ক্ষুধায় যা দিচ্ছি তাই খাচ্ছে। ভর্তা, ভাজি শেষ বাজারে আবার আনতে পাঠিয়েছি। ডালও প্রায় শেষ। কিন্তু লোকজন শুধু আসছেই।

আজ খাবার দাম অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি স্বীকার করে তিনি বলেন, আজ আড়তে মাছ পাইনি। ফলে বেশি দামে অন্য আড়ত থেকে মাছ আনতে হয়েছে। বেশি দামে পণ্য এনেছি কম দামে তো আর বিক্রি করতে পারবো না। তবে লোকজনের কোনো অভিযোগ নেই। তারা খাবার পেলেই খুশি।

খাবার হোটেলগুলোয় কাজ করে এমন কয়েকজন জানালেন, তারা দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। গত ৫ বছরেও এত লোক তারা দেখেননি। দুপুরে হোটেল খোলার পর থেকে কাস্টমার আসতে শুরু করে, কিন্তু থামার নাম নেই। যে যা যেভাবে পাচ্ছেন, খাচ্ছেন। শুধু ইলিশ মাছ পেলেও তারা খুশি হয়ে খাচ্ছেন।

তারা আরও জানান, অন্যান্য দিন মাছ ভাজা, ভর্তা, বেগুন ভাজা, ডাল দিয়ে প্যাকেজ বিক্রি হতো। কিন্তু আজ তা করা যাচ্ছে না। সবাই আলাদা মাছ কিনে নিচ্ছে, তারপর সেটা ভেজে দেওয়া হচ্ছে। তাই খাচ্ছেন পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার খুশিতে আত্মহারা মানুষরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।