পটুয়াখালী: পটুয়াখালী শহরের কাছেই লাউকাঠী নদীর ওপর বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পটুয়াখালী সেতুটি করা হয়েছে। পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে উত্তর দিকে ২০০ মিটার দূরত্বে সড়ক পথে এই সেতু নির্মাণ করা হয়।
এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের নতুন মাত্রা। শুরু হয় ফেরিমুক্ত সড়ক যোগাযোগের আন্দোলন। সেই থেকেই ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে একের পর এক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
২০০০ সালের আন্দোলনে পরিসমাপ্তি হয় আজ (২৫ জুন শনিবার) বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের দুই যুগ আগে যে সেতুর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র বিমোচন হবে বলেও প্রত্যাশা করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়ে আরও ৫টি সেতুর তথ্য উল্লেখ্য করা হলো।
শহীদ শেখ কামাল সেতু: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে কলাপাড়া-নীলগঞ্জ পয়েন্টে আন্ধারমানিক নদের ওপর ২০১৬ সালে নির্মিত হয় এ সেতু। প্রায় ৮৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নামকরণ হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের নামে।
শহীদ শেখ জামাল সেতু: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের হাজীপুর-পুরান মহিপুর পয়েন্টে সোনাতলা নদীর ওপর ২০১৬ সালে নির্মিত হয় শেখ জামাল সেতু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের নামে এ সেতুর নামকরণ হয়েছে।
শহীদ শেখ রাসেল সেতু: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের মহিপুর-আলীপুর পয়েন্টে শিববাড়িয়া নদীর ওপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতু। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে এ সেতুর নামকরণ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি এই সেতুটির নিচে।
শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু; বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে কীর্তনখোলা নদীর ওপর ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু। স্থানীয়ভাবে দপদপিয়া সেতু নামেও পরিচিত এটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নামে এ সেতুর নামকরণ হয়েছে।
পায়রা সেতু: পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি দেশের পঞ্চম বৃহত্তম সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১,৪৭০ মিটার (৪,৮২০ ফুট)। এ সেতু নির্মাণের পর থেকে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১১১.৫ কিলোমিটার যাত্রাপথে ফেরি পারাপারের প্রয়োজন সমাপ্ত হয়। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। এছাড়াও ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ওপর নির্মিত মেজর এম.এ জলিল (শিকারপুর) ও বাবুগঞ্জ এলাকায় সুগন্ধা নদীর ওপরের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধণ করেছিলেন। প্রায় ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ৩৯০ মিটার দীর্ঘ। দুটি সেতুর অবস্থানও খুব কাছাকাছি।
তবে এই সেতুর সঙ্গে আরও ১১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকলেও পুরো এলাকায় কোনো বাতির ব্যবস্থা ছাড়াই ২০০৩ সালের ১২ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তড়িঘড়ি করে সেতু দু’টিতে যান চলাচলের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
এএটি