ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কল্পনাও হরতে পারি নাই এত সুন্দারভাবে পদ্মা পাড়ি দিমু’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
‘কল্পনাও হরতে পারি নাই এত সুন্দারভাবে পদ্মা পাড়ি দিমু’ ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: অ্যা হইলো অন্যরহম এক অনুভূমি। যেহানে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেতে দ্যাড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগতে, হ্যাহানে মাত্র সাড়ে ৭ মিনিটে ওপার গোনে এপারে আইছি।

কল্পনাও হরতে পারিনাই এত সুন্দারভাবে পদ্মা পাড়ি দিমু একদিন।
 
বাংলানিউজকে এ কথা বলেন বরিশাল-ঢাকা রুটের সাকুরা কোম্পানির বাসের চালক কাজী আনোয়ার।  

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধইর‌্যা পরিবহন সেক্টরের লগে আছি, আর ৫ বছর ধইরা তো সাকুরার গাড়িই চালাই। ফেরিঘাটে কতো সময় বইসা থাহোন লাগছে, আবার ফেরি পাড় হইতেও তো দেড়-দুইঘন্টা লাগতো। কিন্তু এহন কোন কষ্ট নাই, সেতুর টোল দিয়া একটানে পদ্মা পাড়ি দিয়া বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। হেই সকাল সাড়ে ৮ টায় সায়েদাবাদ দিয়া রওয়ানা দিয়া পৌনে ১ টায় বরিশাল আইয়া পোছলাম। আগের দিন হইলে তো আড়াইটার আগে পোঁছতাম না।
 
তার মতো ইলিশ পরিবহনের বাসের চালক এনামুল হোসেন বলেন, স্বপ্নের সেতুর ওপর দিয়া পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়া নিজের কাছেই মনে হইছে, বাস্তবে না স্বপ্নে আছি। কয়েক মিনিটের মাথায় যখন সেতু পার হয়ে গেলাম, তখন সত্যিই মনে হইছে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য একটা উপহার-ই দিছেন। যার ফল একদিন প্রত্যেকটা মানুষ ভোগ করবে।
 
তিনি বলেন, সকাল ৮টায় যাত্রাবাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়া বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল নিরাপদেই যাত্রীদের নিয়ে পৌঁছেছি। ফেরি থাকলে দুই ঘণ্টার মতো বেশি সময়  লাগতো।
 
আরও আগে আসা যেতো জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিনে একটু বেশি সময় ব্যয় হইছে, কারন সেতুর টোলঘর পার হইতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগছে। ছোট গাড়িতে পুরো টোলঘর ভড়া। ব্রিজেও অনেক গাড়ি, যাদের আরোহীরা সবাই স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে আইছে। তবে টোলঘর ফ্রি হইলে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা যাওয়া করা যাবে।
 
দশমিনাগামী অন্তরা পরিবহনের বাসের চালক রেজবি বলেন, আগে ঢাকার সায়েদাবাদ দিয়ে দশমিনা যেতে গোটা দিন লেগে যেতো। কিন্তু টোলঘরের গাড়ির দীর্ঘ ঠেলে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে মাত্র ৪ ঘণ্টায় বরিশালেই আসছি, আশা করি আর দুই ঘণ্টার মাথায় দশমিনা থাকতে পারবো। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি কমছে।
 
কুয়াকাটাগামী মিজান বাসের চালক এনামুল হোসেন বলেন, সকাল ৮টার দিকে সায়েদাবাদ থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অল্প সময়েই পদ্মাসেতুর টোলঘরে এসে পৌঁছাই। সেখানে প্রাইভেট গাড়ির অনেক চাপ। ফলে সেখানে কিছুটা সময় লেগেছে। আর টোল দেয়ার পর পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে হিসেবে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টার একটু বেশি। তবে রাস্তায় থ্রি হুইলার না থাকলে টেনশন ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে। সময়ও আরও কম লাগবে।
 
সকাল ৮টায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রওয়ানা দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশালে পৌঁছে সাকুরা পরিবহনের যাত্রী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুরুচি বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, যখন আমাদের গাড়ি পদ্মা সেতুর ওপর উঠলো তখন আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য  আমাদের সবাইকে বিমোহিত করেছে। মনে হয়েছে স্বপ্নে আছি। আর যখন ব্রিজ থেকে নামলাম তখন মনে হয়েছে স্বর্গ থেকে আসলাম। স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণে কত বাধা-বিপত্তি ছিলো, কিন্তু আজ আমরা কতটা মসৃণ পথ ধরে বরিশালে চলে আসলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না।
 
ইলিশ পরিবহনের যাত্রী ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যখন গাড়িটি আমাদের নিয়ে পাড় হচ্ছিলো তখন আলাদা এক অনুভূতি কাজ করেছে। মনে চাচ্ছিলো গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ব্রিজের ওপর দিয়ে আসি। চিৎকার করে বলি- এটা আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য এটা করে দিয়েছেন।
 
উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা বরিশাল রুটে আগে থেকেই সার্ভিসে থাকা পরিবহনগুলো আজ থেকে তাদের বাসের সংখ্যা যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি নতুন নতুন যুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো যাত্রীসেবা দিতে শুরু করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
এমএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।