ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দেশের সঙ্কটে আ. লীগ সরকার মানুষের পাশে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
দেশের সঙ্কটে আ. লীগ সরকার মানুষের পাশে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী ফাইল ছবি

ঢাকা: ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোনো সঙ্কটে পড়লে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের পাশে সব সময় আছে, থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কৃচ্ছতা সাধন এবং অপচয় বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সঙ্কট কাটিয়ে এ পর্যন্ত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছি যার মোট আর্থিক মুল্য ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬ শ ৬৯ কোটি টাকা। এই প্রণোদনা কার্যক্রম আমরা ৭১.৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রণোদনা চলমান থাকবে। আরেকটি সুখবর হলো ইতোমধ্যে রফতানি খাত এটা যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে আমরা রফতানি করতে পেরেছি। ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্লাবে বাংলাদেশ যোগদান করেছে অতিমারি মোকাবিলা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে করোনাকালে গ্রামীণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় এবং গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা কমে যায়। বরং শহর থেকে মানুষ গ্রামে চলে যায়। কারণ গ্রামের অর্থনীতি ও পরিবেশ অনেক ভালো ছিলো। করোনাকালে সব থেকে কৃষি খাতের উপর আমরা জোর দিয়েছি কারণ আমাদের খাদ্য উৎপাদন যাতে নিশ্চিত থাকে সেটা আমরা বার বার আহ্বানও করেছি। কাজেই কৃষি খাতের উৎপাদন স্বাভাবিক ছিলো। শিল্প খাত যাতে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।  

তিনি বলেন, মানুষের জীবনজীবিকার যতটুকু সুবিধা দেওয়া সেটা আমরা দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ কোনো সংকটে পড়ে আমি এটুকু কথা দিতে পারি যে আওয়ামী লীগ সরকার একইভাবে মানুষের পাশে সব সময় আছে, থাকবে। যখনই করোনাটা কমে গেছে সারা বিশ্বে তখনই আমাদের আমদানি বেড়েছে। তবে এই আমদানি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে। আমরা মনে করি, যেহেতু বেশীরভাই মেশিনারি আমদানি করেছি। এগুলি যখনই স্থাপন হবে শিল্প চালু হবে তার থেকে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এটা নিয়ে দুশ্চিতার কিছ নেই। এটা করতে গিয়ে হয় তো আমাদের ডলারের কিছুটা টান পড়েছে, কিন্তু সেটা এখন মানে আমি মনে করি আশঙ্কাজনক কোনো বিষয় নাই। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থ বছরে ২২ জুন ২০২২ পর্যন্ত ৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারে সরবরাহ করেছে। বিগত বছর অক্টোবর মাসে রিজার্ভের পরিমাণ এই করোনাকালিন সময় সব কিছু বন্ধ ছিলো প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিলো যা এখন ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আমদানি বেড়েছে সেই কারণে। তাছাড়া কৃষকদের জন্য সার সব কিছু কিনতে হচ্ছে। তবে আমি মনে করি এটা বিষেষ করে মুল্যস্ফিতি যেটা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য বিপরীতে টাকার মূল্যমান পুননির্ধারন করা হচ্ছে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। বিলাসবহুল সমস্ত আমদানি যাতে কম হয় সেটা আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো আমাদের প্রয়োজন নাই সেটা যাতে সবাই কম আমদানি করে সে জন্য আহ্বান জানাবো। যেগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় সেগুলো আমাদের আনতে হবে এটা ঠিক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকে কৃচ্ছতা সাধন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ জায়গায় থেকে যতটুকু সম্ভব কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে, প্রত্যেককে নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং মিতব্যয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ পানি ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না। অপচয় করবেন না। কৃচ্ছতা সাধন করে সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। ব্যাক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় বাড়াতে হবে। সব প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও অপচয় বন্ধ করতে হবে। আমদানিকৃত বিলাসবহুল দ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কথায় কথায় বিদেশে চিকিৎসা নিলে হবে না, দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়। আজকে যে সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং করোনা মহামারি এটা মোকাবিলা করেই আমাদের আগাতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরের যে বাজেট পেশ করা হয়েছে আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুত খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেবো না, যার ফলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে। সেকারণে কার্যকর ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভর্তুকি ব্যয় সহনশীল মাত্রায় রাখা এবং আমদানির উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট হতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় আমদানি-ভিত্তিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যে ঊর্ধ্বগতি তা নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর প্রাধান্য দিয়েই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক প্রতিকূল অবস্থায় এগোতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই। আমাদের দেশে-বিদেশে বাইরে সব জায়গায়তো একটা বাধা পেতে হয়। সেটা অতিক্রম করে আমরা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করছি। তার কারণ আমাদের দেশের মানুষ তাদের আলাদা শক্তি আছে। তারা বুঝতে পারে অনুধাবন করতে পারে। তখনই তাদের শক্তি বোঝা যায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সেটা প্রজোয্য হয়েছে। জাতির পিতার ডাকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এদেশের মানুষ। তারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল সেই মানুষের দেশ আমাদের। আমাদের মানুষকে নিয়েই এগোতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা ভাইরাস এটা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় চাই। জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে এই বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো।  

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক। জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত যে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য জনগনের সাহসটি ছিলো আমার একমাত্র সম্বল। এটা আমাদের বাঙালি জাতির আত্মপ্রত্যয় এবং সক্ষমতার বীরত্বগাঁথা। বাংলাদেশ যে পারে। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারে নাই। বলেছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু করবো। তখন অনেকেই বিশ্বাস করে নাই। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো। আমার বিশ্বাস, আমার জনগণ।

তিনি বলেন, তাদের কল্যাণ করা আমাদের কাজ। সেই কাজটা সফলভাবে করতে পেরেছি। পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করে দিয়েছি। এই সেতুর সঙ্গে রেললাইন, সেটা ঢাকা থেকে গিয়ে একেবারে যশোর পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। পরবর্তীতে, যদিও এটা খুব কঠিন কাজ, তারপরও সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। আমরা একেবারে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি হয়ে যেন একেবারে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন পৌঁছাতে পারে সেই জন্য পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে। কিন্তু এখানে এত বেশি নদী-নালা, মাটি এত নরম। করাটা খুব কষ্টকর। তবুও যতদূর পারা যায় আমরা তা করবো। এই প্রত্যয় আমাদের আছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। সারা বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে, কথা দিয়েছিলাম। দেশের মানুষের ঘরে ঘরে আলো দিয়েছি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিলো। পদ্মা সেতু হওয়ায় আর অবহেলিত থাকবে না। সেখানে শিল্পায়নের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এসকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।