ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষ গোনায় অবহেলা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
মানুষ গোনায় অবহেলা!

হবিগঞ্জ : সারা দেশের ন্যায় হবিগঞ্জেও শেষ হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহ গণনার কার্যক্রম। কিন্তু এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও গণনার আওতায় আসেননি কামরুল ইসলাম ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।

কামরুল ইসলামের ভাষ্য, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। তবে জনশুমারি ও গৃহ গণনা কার্যক্রমে দায়িত্বরত কেউ তাদের বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেননি। গেলে তো অবশ্যই দরজায় স্টিকার লাগানো থাকতো। কামরুলের প্রশ্ন- তার পরিবারের সদস্যরা কি দেশের জনসংখ্যার মধ্যে নয়?

শুধু কামরুল ইসলামের পরিবারই নয়; গণনা থেকে বাদ পড়েছেন জেলার আরও অসংখ্য মানুষ। সাত দিনব্যাপী চলা এ কর্মযজ্ঞে দায়িত্বরত অনেকের মধ্যে দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে অনেকে গণনা থেকে বাদ পড়েছেন বলে বিভিন্ন এলাকার লোকজন দাবি করেছেন।

যদিও সরকারের পরিসংখ্যান অফিস বলছে, জেলার সকল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু, সরেজমিন পরিদর্শন এবং গণনা থেকে বাদ পড়া লোকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় ঢের অবহেলার চিত্র।

হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা জাহিদুল আলম বলেন, জনশুমারি ও গৃহ গণনার কার্যক্রম চলার সময়কালে কেউ তার পরিবারের তথ্য নিতে আসেননি। সাতদিন ধরে তথ্য দেওয়ার জন্য লোকও খুঁজেছেন; কিন্তু কাউকে পাননি।

মাধবপুর পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন ভূইয়া জানান, তিনি দুই বছর ধরে বিল্লাল মিয়া নামে এক ব্যক্তির বাসার ভাড়াটিয়া। এবারের জনশুমারি ও গৃহ গণনার কার্যক্রমে দায়িত্বরত কেউ তার পরিবারের তথ্য নিতে যাননি।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় জাহির মিয়া ও এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে রাজু দাসের সঙ্গে। তাদের অভিযোগও একই। এ ছাড়া এলাকার প্রায় ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য পাওয়া গেছে।

মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বাসিন্দা স্বাস্থ্য সহকারী আসিফ আহমেদ বলেন, আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। তথ্য সংগ্রহকারীরা আমার বাড়ি এসেছেন ঠিকই; কিন্তু তারা শুধু আমার স্ত্রীর তথ্য নিয়েছেন। ছেলে-মেয়ে নানাবাড়িতে থাকায় তাদের তথ্য নেননি।

একইভাবে অভিযোগ করেন বানিয়াচং উপজেলার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা কিশোর মিশ্র, মোহনপুর এলাকার ভাড়াটিয়া শরিফুল ইসলাম, শায়েস্তানগর এলাকার রুবিনা বেগম জানানসহ অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, কোথাও কোথাও তথ্য সংগ্রহ না করেই দরজার সামনে স্টিকার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো তথ্যই সংগ্রহকারীরা নেননি।

হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকার ব্যবসায়ী সামছুল আলম বলেন, এবারের জন শুমারির কাজ অনেকটাই সহজ ছিল। কোনো তথ্যই হাতে লেখার প্রয়োজন হয়নি। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ট্যাবে। এইচএসসি পাস ছেলেমেয়ে দিয়ে গণনার কাজ করানো হয়েছে। তাদের অনেক বেশি সম্মানী দেওয়া হয়েছে। তবু অনেককেই দায়িত্বহীনভাবে কাজ করতে দেখা গেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, মানুষ গণনায় এমন অবহেলা হলে কখনও দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা জানা যাবে না।

যোগাযোগ করা হলে জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ষষ্ঠ ধাপে সারাদেশের মতো হবিগঞ্জেও গত ১৫ জুন ডিজিটাল জনশুমারি এবং গৃহ গণনার কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২১ জুন রাত ১২টায়। বাদ পড়াদের গণনায় যুক্ত করা ও অন্যান্য সংশোধনীর কাজ শেষ হয় ২৩ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত। জেলাজুড়ে ৪ হাজার ৪৪৪ জন এ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

অভিযোগের ব্যাপারে কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদ ই মাশতাহাব বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি শতভাগ মানুষকে গণনার আওতায় আনতে। অনেকেই বাদও পড়েছিলেন। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের আমরা পরবর্তীতে যোগ করেছি। এরপরও যদি আরও কেউ বাদ পড়ে থাকেন, কী পরিমাণ বাদ পড়েছেন; পরবর্তীতে তাও দেখার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad