ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বর্তমান অবস্থায় ইভ্যালির টাকা ফেরত অসম্ভব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
বর্তমান অবস্থায় ইভ্যালির টাকা ফেরত অসম্ভব সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক -ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। দুটি ওয়্যার হাউজে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।

এ অবস্থায় বিনিয়োগকারী আনতে না পারলে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ সম্ভব নয়।

শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান উচ্চ আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত ইভ্যালির চেয়ারম্যান বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

তিনি বলেন, ইভ্যালির দুই ধরনের পাওনাদার রয়েছে। যারা সাপ্লাইয়ার আর যারা ক্লায়েন্ট। এখানে সাপ্লায়েরদের পাওনা বেশি। বর্তমানে ইভ্যালির যে সম্পদ রয়েছে তাতে পাওনাদারদের সন্তুষ্ট করা অসম্ভব।

সাভারে ইভ্যালির দুটি ওয়্যার হাউজে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। এছাড়া, ৯টা ছোট পুরাতন কাভার্ডভ্যান ও ৫টা গাড়ি পেয়েছি। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তেমন টাকা নেই। যা আছে তা পাওনাদারদের টাকার তুলনায় কিছুই না, এটা সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো।

ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন উচ্চ আদালতে বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন বলে একটি এভিটওভিট দিয়েছেন। তারা যদি বিনিয়োগকারী আনতে পারে তাহলে কোম্পানি চলবে, পাওনাদাররাও টাকা পাবে। এটা নির্ভর করছে তারা বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন কি-না।

সার্ভারের পাসওয়ার্ড না থাকায় মিলেনি কোন তথ্য: ইভ্যালির সার্ভারের এক্সেস না থাকায় দেনা-পাওনা ও লেনদেনের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ইভ্যালির সার্ভারটি অপারেশনাল করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটির পাসওয়ার্ড আমাদের কাছে নেই। পাসওয়ার্ড জানতে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা জেলে গিয়ে রাসেলের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি লিখিত দিয়েছেন, 'পাসওয়ার্ডটি তার মনে নেই। এটি তার ডেস্কের ড্রয়ারে একটি কালো ডায়েরিতে লেখা আছে। '

এরপর আমরা দেশের এটুআই, সিআইডিসহ একাধিক আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বসে পাসওয়ার্ডটি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সার্ভারটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যামাজোনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা শুধু একটি কথাই বলেছে 'পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। '

ইভ্যালির বর্তমান এমডি মাহবুব কবীর মিলন এ বিষয়ে বলেন, আমরা ইভ্যালির আইটি প্রধান তানভিরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের বলেছেন, রাসেল গ্রেফতারের আরও ২ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, তখন আইডি, পাসওয়ার্ড সব রাসেলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরে তার আগের পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করে দেখেছে এক্সেস সম্ভব হয়নি, তার মানে রাসেল পরে আবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন। তানভিরের অধীনে যারা কাজ করতেন তারাও পাসওয়ার্ডের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।

৬ গেটওয়েতে আটকে আছে আরও ২৫ কোটি টাকা: গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ইভ্যালির ৬টি গেটওয়েতে সব লেনদেন হয়েছে। আমরা সেসব গেটওয়ের আটকে থাকা অর্থ গ্রাহকদের ফেরতের কথা আলোচনা করছিলাম। কিন্তু তারা বলেছে, ইভ্যালির কাছ থেকে পাওনার বিষয়ে লিখিত নিয়ে আসলে যে নির্ধারিত ওই গ্রাহকের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়নি তাহলে আমরা অর্থ ব্যাক করতে পারব।

কিন্তু সার্ভারের এক্সেস না থাকায় এটাও সম্ভব হচ্ছে না। কে পণ্য কিনেছে, কার পণ্য ডেলিভারি হয়নি- এটা জানা সম্ভব হচ্ছেনা । যতক্ষণ পর্যন্ত সার্ভার সচল না হবে ততক্ষণ ওই ২৫ কোটি টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকবে। একইভাবে সার্ভার সচল না হলে পণ্য থাকলেও কোন গ্রাহককে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে পণ্য পেয়েছে কি-না বা আদৌ পাবে কি-না জানা সম্ভব হচ্ছে না।

লেনদেনের তথ্য ছাড়া অডিট হচ্ছে যেভাবে: চেয়ারম্যান বিচারপতি মানিক বলেন, হাইকোর্ট আমাদেরকে অডিট সম্পন্ন করার জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা হুদা-ভাসি প্রতিষ্ঠানকে অডিটের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা বলেছে অডিট শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তারা এ মাসের শেষ নাগাদ অডিট রিপোর্ট দিতে পারবে।

সার্ভারের এক্সেস না থাকায় গ্রাহদের লেনদেনের তথ্য ছাড়াই কীভাবে অডিট হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইভ্যালির যত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে সেসব ব্যাংককে ট্রানজেকশানের স্টেটমেন্ট দিতে বলেছি। তারা আমাদেরকে লেনদেনের সব স্টেটমেন্ট দিয়েছে। এছাড়া, ইভ্যালির কার্যালয়ে আমরা ঢোকার পর অনেক ডকুমেন্টস পেয়েছি। এসবের ভিত্তিতেই অডিট চলছে। অডিট রিপোর্টে সার্ভারের তথ্য না পাওয়ার বিয়টিও উল্লেখ থাকবে।

বিচারপতি মানিক বলেন, আমাদেরকে হাইকোর্ট অডিট রিপোর্টের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টে সাবমিট করব। তারপর হাইকোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

হাইকোর্ট আমাদের বলেছে ইভ্যালি চালানো সম্ভব হলে পরিচালনা করার জন্য, নয়তো প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ লিকুইড করে পাওনাদারদের যতটুকু সম্ভব পরিশোধ করার জন্য। আমরা চাইব প্রতিষ্ঠানটি চলুক। অন্যথায় যে সম্পদ রয়েছে, এর লিকুইড করলে পাওনাদারদের নামমাত্র ফেরত দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে ১ লাখ টাকা পাওনাদার সে হয়তো পাবে ২৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।