ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
সম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন চলছে। ছবিটি বরিশালের সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের।

ঢাকা: নড়াইলে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কলেজ অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটানো বলে অভিযোগ করছেন দেশের বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতরা। দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষকদেরকে টার্গেট করে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাটেড কলেজের ভারপ্রান্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে আনা হয়। এর আগে মুন্সিগঞ্জের এক স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে একই অভিযোগে জেলে নেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লঞ্চিত করা, ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে হয়রানির চেষ্টা, নওগাঁর সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে হয়রানির চেষ্টার ঘটনা, সম্প্রতি ঢাকার সাভারে স্কুলশিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের হত্যার ঘটনা সারা দেশে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়া একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে বলে বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন।

ওই রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, উদ্দেশ্যমুলকভাবে টার্গেট করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষকদের উপর হামলা, লাঞ্চিত, অপমানিত করার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের টার্গেট করে তাদেরকে আঘাত করার মাধ্যমে সম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। সম্প্রদায়িক অপশক্তি সারা দেশ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এসব তারই অংশ।

তাদের অভিযোগ এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে যায়। আর এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, বিচার হয় না। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে তারা এর জন্য দায়ী করছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পর অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় ওই অপরাধীরা সংখ্যালঘু শিক্ষকদের দুর্বল ভাবতে শুরু করেছে। সংখ্যালঘুদের আঘাত করলে কিছু হবে না সম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে এই ধারণা তৈরি হচ্ছে। আবার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা তৈরির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে বলেও ওই নেতারা জানান।  

সরকার প্রশাসনের কাছে তারা এই সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি সব সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি নিজ অবস্থান থেকে ও ঐক্যবদ্ধভাবে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা তৈরী করতে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, সংখ্যালঘু শিক্ষকদের টার্গেট করে তাদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষক বিষয় না, সংখ্যালঘু শিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রদায়িক দৃষ্টিভক্তি থেকে ইচ্ছকৃতভাবে, পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষকদের দুর্বল ভাবা হচ্ছে, মনে করা হচ্ছে এদের আঘাত করলে এই শিক্ষকদের মারলে কোনো অসুবিধা হবে না, কেউ কিছু বলবে না। সরকার যদি চুপ থাকে, বসে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে কি করা যাবে। সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে সরকারকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সব সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি নিজ অবস্থান থেকে ও ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, সংখ্যালঘু শিক্ষকদের উপর হামলার, আক্রমণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, নানাভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। লুটেরা, পুঁজিবাদী, ধনীক শ্রেণীর শাসন ব্যবস্থার দুঃখজনক ও আতঙ্কজনক ফলাফল এটা। সরকার এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবন্থা না নিয়ে তাদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে তাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের ধারার জনজাগরণ তৈরি করে এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনায় বামপন্থি শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এসব ঘটনা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র। এর জন্য দায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে আশ্রয় করা হয়। রাঝনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এসব ঘটনা ঘটনায় তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে যায়, বিচার হয় না। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, রাজনৈতিক আশ্রয় যাতে না পায় সেটাও দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারার অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণ তৈরি করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
এসকে/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।