ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কচুয়ার ২৫ মণের ‘টিয়া’র দাম ১০ লাখ টাকা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২২
কচুয়ার ২৫ মণের ‘টিয়া’র দাম ১০ লাখ টাকা

বাগেরহাট: ব্রাহামা জাতের ষাঁড় টিয়া। তিন বছরেই ওজন হয়েছে ২৫ মণ।

কালো ও বাদামী রংয়ের বিশালাকৃতির এই ষাঁড়ের দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতার এই ষাঁড় দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।  

বলছিলাম ঈদুল আজহা উপলক্ষে লালন-পালন করা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার দরিচড় মালিপটন এলাকার বিশ্বজিত বৈরাগীর পালিত ষাঁড় টিয়ার কথা। তিন বছর ধরে শুধু কাঁচা ঘাস, খড়-কুটা, ধান ও ভুষি খাইয়ে বড় করেছেন আদরের ধনকে। খাবারের পাশাপাশি দুই বেলা গোসল ও গোয়ালে বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে টিয়ার জন্য।  

বিশ্বজিতের সঙ্গে স্ত্রী সবিতা বৈরাগী ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে শিউলি বৈরাগীর দিন কাটে গরুর যত্ন করে। বিশালাকৃতির এই গরু নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তারা। প্রতিদিন টিয়াকে দেখতে বিশ্বজিতের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাদের আশা গরু বিক্রির টাকায় স্বচ্ছলতা আসবে বিশ্বজিতের পরিবারে।
বিশ্বজিতের প্রতিবেশী রঞ্জন কুমার হালদার বলেন, টিয়া ছাড়া আমাদের এলাকায় এত বড় গরু আর নেই। আমরা প্রায় প্রতিদিনই গরুটিকে দেখতে আসি। দেখেই শান্তি আমাদের।

স্থানীয় মো. আইয়ুব আলী খান বলেন, বিশ্বজিতের গরু দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই গরুর যত্নে করে সময় কাটে বিশ্বজিতের পরিবারের সদস্যদের। বিশ্বজিত ভালো দামে এই গরুটি বিক্রি করুক এটাই আমরা চাই।

মালতী বাওয়ালী নামে এক নারী বলেন, সারাদিন বিশ্বজিত ও সবিতার পাশাপাশি তাদের মেয়ে শিউলিও গরুটির খুবই যত্ন করে, তারা গরুটি ভালো দামে বিক্রির আশায় অনেক কষ্ট করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিউলির সব চিন্তা ভাবনা এই গরু নিয়ে। নিজেরা খেতে না পেলেও কখনও গরুকে না খাইয়ে রাখে না বিশ্বজিত। গরুটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে হয়ত বিশ্বজিতের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে।

স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী শিউলি বলেন, ৮-৯ বছর ধরে আমরা গরু পালন করি। কিন্তু এবারই আমাদের সব থেকে বড় গরু হয়েছে। বাবা অসুস্থ, বাইরে কাজ করতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চলে। ঠাকুরের কৃপায় এবার গরু বিক্রি করে আমাদের সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে। আমি ভালো ভাবে পড়াশুনা করতে পারব।

গরুর মালিক বিশ্বজিত বৈরাগী বলেন, তিন বছর আগে আমার আতালে (গোয়ালে) নিজের গাভীতে টিয়ার জন্ম হয়। আদর করে নাম রেখেছি টিয়া। খুবই যত্নে বড় হয়েছে সে। সকালে এক কেজি ভুষি ও এক কেজি ধান খেয়ে টিয়ার দিন শুরু হয়। এরপরে সারাদিন খড়-কুটা ও কাঁচা ঘাস খেয়েই দিন কাটে টিয়ার। সকালে টিয়ার নাস্তার পরে আমি চলে যাই ঘাস কাটতে। পরে সারাদিনই আমার মেয়ে শিউলি ও স্ত্রী সবিতাই এই গরু সামলায়। গরুটাকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে ঘরটাকে সংস্কার করব। মেয়ে ও স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার আশাও ব্যক্ত করেন হতদরিদ্র বিশ্বজিত।

তিনি আরও বলেন, টিয়া ছাড়াও আমার চারটি গরু রয়েছে। এই গরুতে আমার ভাত কাপড় হয়। তবে এই প্রথম আমার গোয়ালে এত বড় গরু হয়েছে। এটি আমার খুব আদরের, তিন বছর ধরে সন্তানের মতো লালন পালন করেছি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফার রহমান বলেন, ইদুল আজহা উপলক্ষে বাগেরহাটে খামারি ও পারিবারিক পর্যায়ে অনেক গরু পালিত হয়েছে। কচুয়ার বিশ্বজিত বৈরাগী নামে এক ব্যক্তির অনেক বড় একটি গরু রয়েছে। গরুটিকে পালন করতে কোনো প্রকার হরমোন ও স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়নি। গরুটির ওজন ২৫ মণের বেশি। আশাকরি সে ভাল দামে বিক্রি করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।