ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জমির জন্য ছেলে-বৌয়ের নির্যাতন,  ৩ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া মা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
জমির জন্য ছেলে-বৌয়ের নির্যাতন,  ৩ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া মা  বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া

গাইবান্ধা: জমি লিখে না দেওয়ায় নির্যাতন করে বিধবা বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ছেলে মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতারের বিরুদ্ধে।  

নির্যাতিত ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া গত তিন বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, এ কাজের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে মা ও তিন বোনকে হয়রানি করছেন ছেলের বউ শাম্মী।  

বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, ছেলে ও ছেলের বউ তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলেনি।  

এ ঘটনাটি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের তরফ আল গ্রামের। মর্জিনা বেওয়া ওই গ্রামের মৃত ইউনুস আলী সরকারের স্ত্রী। নয় বছর আগে মারা যান ইউনুস আলী। তাদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছেন। ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনের এমন ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।

ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধা মা মর্জিনা বেওয়ার সঙ্গে। তার অভিযোগ, স্বামীর রেখে যাওয়া বসতবাড়িতে দুই ছেলের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি। এরপর দুই ছেলে ও স্ত্রী মিলে নানা কারণে তার ওপর নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে তারা বিধবা মর্জিনাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেন। পরে বসতভিটার জমি নিজের নামে লিখে দিতে মাকে চাপ দিতে থাকেন ছোট ছেলে মশিউর ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতার। কিন্তু রাজি না হওয়ায় প্রায়ই তারা মারধরসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান। এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশে বসতভিটার পাকা বাড়িসহ আট শতাংশ জমি দুই ছেলেকে এবং ফাঁকা আট শতাংশ জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় মর্জিনাসহ তিন মেয়েকে। ওই জমিতে বসবাসের জন্য টিনসেডের ঘর তোলা হলেও তাতে বেশি দিন থাকা হয়নি মর্জিনার। সম্পদের লোভে মশিউর ও তার স্ত্রী ওই ঘরের তালা ভেঙে সমস্ত আবসবাপত্রসহ ঘরটি ভাঙচুর করেন।  

মর্জিনা বেওয়া আরও বলেন, আমাকে সব সময় ওরা (ছেলে ও ছেলের বউ) মারপিট করে। আমাকে দেখলেই তারা বাঁশ-লাঠি, কখনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। প্রাণভয়ে মেয়েদের বাড়ি এবং আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আমার কেটে গেছে তিন বছর। সর্বশেষ গত ১৮ জুন ছেলে-ছেলের বউ আমার মাথা গোজার ঠাঁই ঘরটিসহ জমি দখলের চেষ্টা করে। কেউ বাধা দিলে তাকেও গালিগালাজ ও হত্যার ভয় দেখায়। পুলিশকে জানালে তারাও অসহযোগিতা করে।  

মর্জিনা বেওয়া এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান এবং ছেলে ও তার স্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।  

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমানসহ একাধিক নারী ও পুরুষের অভিযোগ, ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনের ঘটনায় তিন বছর ধরে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধা মা মর্জিনা। প্রতিকার চেয়ে অনেকের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন তিনি। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলেই ছেলে এবং তার বউ গ্রামের লোকজনকে গালিগালাজসহ মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি দেখান। দিনদিন তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বাড়ায় এলাকার শান্তি নষ্ট হচ্ছে।

অভিযোগে বিষয়ে জানতে বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতারকে। তবে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর মোবাইল ফোনে কথা বলেন মশিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী আকতারের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও ননদ এবং ভাসুর তাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছি। কাউকে হয়রানি কিংবা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এছাড়া ছেলে মশিউর রহমান ফোনে মায়ের সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন। তিনি জানান, মিথ্যার জন্যই আদালতে মায়ের করা মামলাটি খারিজ হয়েছে।  

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, এ ঘটনায় বৃদ্ধার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার জানান, এর আগে ছেলের বউকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নতুন কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।