ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘হানাদারদের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তান যেতেন রজব আলী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
‘হানাদারদের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তান যেতেন রজব আলী’

ঢাকা: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি দেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে গড়ে তোলেন আলবদর বাহিনী। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় সরাসরি গণহত্যা, লুটপাট ও নানা নির্যাতনে জড়িত ছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভৈরবের পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও নেন। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করলেও তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সখ্য ভুলতে পারেননি রজব আলী। ২০০০ সালের আগে বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পাকিস্তান ভ্রমণ করেছেন।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে (৬৯) গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (২ জুলাই) রাতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর আমিনুল হক ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর রজব আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে কলবাগান থেকে পলাতক রজব আলীকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার রজব আলী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেন। ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় রজব আলী পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও নির্যাতন করেন। এছাড়া, স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন।

গ্রেফতার রজব আলী ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় তার ৪০ বছর সাজা হয় কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

১৯৮২ সালে জেল থেকে বেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে যান রজব আলী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। তাদের সঙ্গে দেখা করতেই তিনি বেশ কয়েকবার পাকিস্তান গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

১৯৯৭ সালে রজব আলী নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৪ সালে ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর তিনি গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করে বসবাস করেন।

আমিনুল ওরফে রজব আলী ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামে দুইটি বই প্রকাশ করেছেন। বই দুটিতে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শোকাবহ ১৫ আগস্টসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ দাবি করেন।

২০১৪ সালে তার প্রকাশিত ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইটিতে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশন করায় সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।