ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ 

বরিশাল: সারাদেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, ঈদুল আজহার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে আনাসহ ভূমিহীনদের খাস জমির বন্দোবস্তোর দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (০৩ জুলাই) বেলা ১১টায় গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির উদ্যোগে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলুর সভাপতিত্বে সদস্য সাকিবুল ইসলাম সাফিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য সচিব আরিফুর রহমান মিরাজ, সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মামুন উর রশিদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি জাবের মোহাম্মদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জামান কবির সহ অন্যান্য নেতারা।  

এসময় বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও নানাভাবে লাঞ্ছনার ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত। সমাজের প্রতি স্তরে অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে পড়ছে। নড়াইলে ইসলাম ধর্মের নবীকে অবমাননাকারী নুপুর শর্মার বক্তব্যকে সমর্থনকারী শিক্ষার্থী জনরোষ থেকে বাঁচতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে আশ্রয় নেওয়ায় যথাক্রমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে জুতারমালা পড়াবার সময় স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশসুপার উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কারণে স্বার্থ হাসিল করতে না পারা স্থানীয় সরকারদলীয় ব্যক্তিরা এ পুরো ঘটনার সুযোগ নিয়ে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলো। এ সময় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনা সামাল দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এ ব্যর্থতা যেমন অদক্ষতা তেমনি একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগনের সঙ্গে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতার সম্পর্ক না থাকাও বটে। শিক্ষককে জুতার মালা দেওয়া ও অসম্মানের উস্কানি যে সব স্থানীয় নেতারা দিয়েছেন এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিততে তা বাস্তবায়ন হয়েছে তাই তারা সবাই এ ঘটনার জন্য নানান মাত্রায় দায়ি।

বক্তারা আরও বলেন, একছত্র প্রশ্নহীন ক্ষমতার চর্চা যখন সমাজের বিভিন্ন স্তরে দেখা যায় তা সমাজে উগ্রতার বিকাশ ঘটায়। আইন ও বিচার নিজের হাতে তুলে নেবার লক্ষণ দেখা যায়। নড়াইলে শিক্ষকের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। এখানে পুলিশ নিরব থেকে বরং অপরাধ সংগঠিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান কান ধরিয়ে ওঠবস করানোর নির্দেশ দেওয়ার ঘটনা ভিডিওতে দেখা যায়। প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিতে পুলিশ ‘লাঞ্ছনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে অভিযোগ সত্য নয়
বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়। তাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে যে বিচারের সম্মুখীন হতে হয় না এ ধারনা সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত। এজন্য সারাদেশ আজ নৈরাজ্য ও অরাজকতার জমিনে পরিণত হয়েছে।

নেতারা শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত সবার বিচারের দাবি করে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ও দোষী তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের ছাড় দেওয়া চলবে না।

নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৮ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে যে আতাঁত করেছেন তার শাস্তি তাকে পেতে হবে। পাঠ্যপুস্তকসহ দেশের সর্বস্তরে সাম্প্রতিকতার বিষ ঢেলে দিয়ে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার বিচার জনগণ রাজপথে করবে৷ এ অবস্থা থেকে আমাদের নিস্তার পেতে হলে ও দেশকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২২
এমএস/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।