ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মৌসুমি ফল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লটকন’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
মৌসুমি ফল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লটকন’

মৌলভীবাজার: ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রাণপ্রকৃতি অতি মূল্যবান উপাদান। আমাদের প্রকৃতিক পরিবেশে আপন নিয়মে অনাদিকাল ধরেই উৎপাদিত হচ্ছে চেনা-অচেনা নানা জাতের ফল সম্ভার।

এদের কোনো কোনোটাকে আমরা চিনি কিছুটা কম, কিছুটা ভালোভাবে। কোনো কোনো ফল আমাদের কাছে অল্প বিস্তর অজানা। কোনো কোনোটা আবার একেবারেই অচেনা।  

লটকন আমাদের কাছে অল্প বিস্তর পরিচিত ফল। যেভাবেই হোক লটকন আমাদের কাছে অন্যান্য ফলের মতো ব্যাপক পরিচিত লাভ করে বিগত সময়গুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবে ইদানিংকালে পরিচিতি পাচ্ছে এ ফলটি।  

দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ ফলটির সদ্য পরিচিতির সুযোগটিকে কাজেও লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন বাজারে লটকন কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।     

লটকনের রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন ডাক নাম। বুবি, ডুবি, লটকা, নটকোনা, হাড়ফাটা, লটকাউ, কানাইজু, কিছুয়ান, আঁশফল প্রভৃতি নামে পরিচিত। প্রাপ্ত বয়স্ক একেকটি লটকন গাছ সাধারণত ৯ মিটার থেকে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের প্রাক্তন উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার অন্যতম ফল লটকন। এর স্বাদ টক-মিষ্টি। এখন এ ফলটি বাজারে বেশ দেখা যাচ্ছে। টক-মিষ্টির কারণে এ মৌসুমি ফলটি অনেকেই দারুন পছন্দ করেন। আমাদের গ্রামের এলাকায় এ ফলটির নাম বুবি।

তিনি বলেন, এ ফলটি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না, লটকন এক সময় আমাদের প্রকৃতির অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল। বুনো পরিবেশে বা গাছগাছালিঘেরা প্রকৃতির নির্জনে এটি ওয়াইল্ডলাইফ ডায়েট (বন্যপ্রাণীর খাবার) হিসেবে পরিচিত ছিল বেশ। কিন্তু বর্তমানে ফলটি তার পুষ্টিগুণের কারণে বাজারের অন্য ফলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্পর্কে কাজী লুৎফুল বারী বলেন, বর্তমানে লটকন বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। আমাদের দেশের নরসিংদী জেলাতে লটকনের ফলন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর এসব জেলায়ও ইদানিং বাণিজ্যিকভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। আমাদের মৌলভীবাজারের কোনো কোনো চাষি শৌখিনভাবে লটকনের চাষ শুরু করেছেন।

ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ফলটিতে ভিটামিন, খাদ্যশক্তি ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এর ফলে আমাদের ত্বক, দাঁত, হাঁড় প্রভৃতি সুস্থ রাখে। এ ফলের মধ্যে থাকা পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। এসব উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের কোয়ায় খাদ্যশক্তি থাকে প্রায় ৯২ কিলো ক্যালরি। যা শরীরকে সক্রিয় রাখতে এবং দৈনন্দিন কর্মমুখর থাকতে শক্তির যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে।  

আমাদের প্রকৃতির মৌসুমি ফল হিসেবে লটকন বর্তমানে সহজলভ্য ও সমৃদ্ধ একটি ফল। কয়েকদিন পর আর একে পাওয়া যাবে না। তাই যতটুকু সম্ভব দৈনিক খাদ্য তালিকায় মৌসুমি ফলযুক্ত করে অনায়াসেই আমরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে পারি বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।

বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad