ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনার গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
খুলনার গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং! প্রতীকী ছবি

খুলনা: খুলনা অঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ।

কোনো কোনো এলাকায় একটানা এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম ছাড়া শহর এলাকাতেও ইদানীং লোডশেডিং আবারও দেখা দিয়েছে।

গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও শহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য গাজী ফয়সাল আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন বিদ্যুৎ সকালে চলে যায় এবং রাত ১০টার ভেতরে মাঝেমধ্যে আসে। এই কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। কৃষিকাজেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। গভীর রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় সিসিটিভি বন্ধ থাকে, এই সুযোগে চুরি ডাকাতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।

রূপসা উপজেলার দক্ষিণ নন্দনপুর এলাকার লাকি বেগম বলেন, আগের মতো আবারও লোডশেডিং নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ গেলে আর আসে না। সেই আগের মতো লোডশেডিংয়ের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রায় মাসখানে ধরে বিদ্যুতের সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে।

একই উপজেলার রামনগর গ্রামের মামুন বলেন, সকাল থেকে এক ঘণ্টা বিদুৎ থাকলে দুই ঘণ্টা থাকে না, এইভাবে চলতে থাকে। সন্ধ্যার পরে যায় আর আসে রাত নয়টার পর। আবার আধা ঘণ্টা পরে চলে যায় রাত এগারোটার পরে আসে। আবার বারোটার পরে যায় ফজরের পরে আসে। দিন রাত মিলিয়ে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে কয়রাবাসী। দুঃসহ গরমের সঙ্গে দিনে-রাতে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পড়াশোনা ভালো করে করতে পারছে না ছাত্র-ছাত্রীরা।

সোমবার বিকেলে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। লোডশেডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) খুলনা সদর দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার শহর অঞ্চলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। খুলনায় আমাদের গ্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। ২১ জেলায় মোট ৫৮০ মেটাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর ঘাটতি আছে ৩০-৩৫ মেটাওয়াট। আর খুলনায় ঘাটতি আছে ১২ মেগাওয়াট। এটা ফিক্সড থাকে না, ওঠানামা করে।

রোববার (৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক স্ট্যাটাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দুঃখ প্রকাশ করে লোডশেডিংয়ের কারণ জানান।

ওই স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।

তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।