ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ভ্যান হারিয়ে কান্না থামছে না কিশোর দীপ্তর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
ভ্যান হারিয়ে কান্না থামছে না কিশোর দীপ্তর

বাগেরহাট: স্কুল বন্ধ, বাবা অসুস্থ তাই কিছু রোজগারের আশায় ভ্যান চালাতে বের হয়েছিল বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দীপ্ত মৃধা (১৪)।  

সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে যাত্রীদের অনুরোধে ভ্যান থামিয়ে পান আনতে গেলে, কৌশলে দিপ্তর ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় যাত্রীবেশী চোরেরা।

খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যান না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে দীপ্ত। তার চারপাশে জড়ো হয় স্থানীয়রা, তাদের আশ্বাসেও কান্না থামছে না তার।  

ছোট আন্ধারমানিক গ্রামের দিপঙ্কর মৃধার ছেলে দিপ্ত বলে, সকালে বাড়ির সামনে থেকে দুই যাত্রী নিয়ে কচুয়া বাজারে আসি। সেখানে এক যাত্রী নেমে গেলেও অন্যজন আমাকে সাইনবোর্ড বাজারে নিয়ে আসেন। সাইনবোর্ড বাজারে ওই যাত্রীকে নামিয়ে কচুয়া ফিরে যাচ্ছিলাম। এসময় সাইনবোর্ড মোড় থেকে এক যাত্রী ওঠে আমার ভ্যানে। সে আমাকে জোর করে বাগেরহাট নিয়ে আসে। ওই যাত্রী ফোন করে পথ থেকে আরও এক যাত্রীকে ওঠায় আমার ভ্যানে। আমি বাগেরহাটে আসতে চাইছিলাম না। কিন্তু মাল নেবে বলে আমাকে জোর করে এবং তারা বলে আমরা তোমার বাবাকে চিনি। বাগেরহাট শহরের মধ্যে ঘুরে তারা পাইপ নেবে বলে প্রথমে এক দোকানের সামনে দাঁড়ায়। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে মিঠাপুকুর পাড় আসে। সেখানে দাঁড়াতে বলে তারা ভ্যানে বসেই আমাকে পান নিয়ে আসতে বলে। আমি ভ্যানে তালা দিয়ে গেলেও পান কিনে পেছনে ফিরে দেখি ভ্যানসেখানে নেই। তারপর আমি সব দিকে দৌড়াইছি। কিন্তু ওই লোকদের কোথাও পাই না, ভ্যানও পাই না। তারা আমার ভ্যান নিয়ে পালিয়েছে। এখন কি করব, বাবা আমাকে কি বলবে এই বলে কাঁদতে থাকে কিশোর দিপ্ত।

দীপ্ত আরও বলে, কয়দিন আগে কিস্তি (এনজিওর ঋণ) তুলে এই ভ্যানটি বানিয়েছে বাবা। এখনও কিস্তি শেষ হয়নি। এর সঙ্গে সুদের দেনা রয়েছে। এখন কি করব আমরা। দু'বছর আগেও বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে আমার বাবার একটি ভ্যান চুরি হয়েছিল। সেই ভ্যানটিও আমরা আর পাইনি। তারপর অনেক কষ্টে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই ভ্যানটি কিনেছিল বাবা। এই ভ্যানটাও চুরি হয়ে গেল।

মিঠাপুকুর পাড় এলাকার একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী তারক বৈরাগী বলেন, ছেলেটারে দেহি কানতি কানতি এই খানে আইসে দেয়ালের সাথে মাথা টাহাইতেছে। আর ভ্যান গেল কয়ে কানতি কানতি দৌড়দিল। পরে আমরা ডাইকে ওর কাছতে নাম্বার নিয়ে ওর বাবারে ফোন করছি।

দীপ্তর বাবা দিপঙ্কর মৃধা দুপুরে বাগেরহাটে এসে সদর মডেল থানায় এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

দীপঙ্কর মৃধা বলেন, শরীরটা খুব বেশি ভালো না আমার। তাই অভাবের তারনায় ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম ভ্যান চালাতে। কিছু টাকার জন্য আমার পুরো ভ্যানটিই গেল। এখন কিভাবে সংসার চলবে জানি না।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভ্যানটি খুঁজে বের করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এই চোর চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গত ১৫ জুন বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি ইজিবাইক চুরি হয়। যাত্রীবেশী চোরেরা সেবার চালক আবু বক্কর আয়াজকে (২৪) অচেতন করে তার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকটি চুরি করে নিয়ে যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।