ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান (৩৭) ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে (৪২) গ্রেফতার করেছে মহানগর পুলিশের (ডিবি) গোয়েন্দা শাখা।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বিকেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রামীন টেলিকম কর্তৃপক্ষ এবং আইনজীবী ও কতিপয় টেলিকম সিবিএ নেতার যোগসাজশে তড়িঘড়ি করে শতাধিক মামলা থেকে গ্রামীণ টেলিকমকে ইনডেমনিটি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রেজাউল হক রেজা বাংলানিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিবি-গুলশান বিভাগ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আদালত গ্রেফতার দুজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলেও জানান এডিসি রেজাউল হক।
গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে।
শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ৮০-১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কাস প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বরাবর দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার কথা বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
বিভিন্ন আইনানুগ দাবি-দাওয়ার কারণে গত ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ একযোগে বেআইনিভাবে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরে কোম্পানিতে পুনর্বহাল, কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরেও দায়িত্ব না দিলে-কনটেমপ্ট অব কোর্ট, কোম্পানির অবসায়ন দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে শ্রমিকরা এবং শ্রমিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টে প্রায় ১৯০টি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন।
তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এসব মামলা উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ দেওয়া এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র সই হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ২০১০-২০২২ পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ টাকা হারে কোম্পানি হতে এই সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়। শ্রমিকদের সব পাওনাদি ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা।
চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার সুযোগ না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং ওই দুই সিবিএ কর্মচারীসহ ইউনিয়নের কতিপয় নেতার যোগসাজসে ওই অ্যাকাউন্টের অনুমান ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে চেকের মাধ্যমে গত ১৭ মে এবং ২৫ মে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসা হয়।
গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ওই অ্যাকাউন্টের মোট তিনজন সিগনেটরি ছিলেন গ্রেফতার গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মামলার বাদী অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান।
অন্যান্য শ্রমিকদের ন্যায় টাকা পাওয়ার পরেও যোগসাজশে সিবিএ সভাপতি কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান এবং সহ-সভাপতি মাইনুল হাসান ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে মিরপুরে তাদের ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তিন কোটি করে মোট নয় কোটি টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করে।
ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবী অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি ও পারিতোষিক হাতিয়ে নেন বলেও জানান এডিসি রেজাউল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
পিএম/আরআইএস