ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে কমেও কমছে না পানি, ফের বন্যার ভয়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
সিলেটে কমেও কমছে না পানি, ফের বন্যার ভয় ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: রোদ থাকলে কমে, বৃষ্টি হলে বাড়ে নদীর পানি। মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) রাতেও সিলেটে ভারী বর্ষণ হয়েছে।

এতে নদীতেসহ বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় ফের বন্যার আশঙ্কায় সিলেটের বানভাসি মানুষ।
 
বানভাসিদের অনেকের ভাষ্য, ‘রোদ দিলে পানি কিছুটা কমে, আবার বৃষ্টি হলে বেড়ে যায়। ’ ফলে এবারের ভয়াবহ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলে।
 
মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে বন্যার পানি। দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের বাসিন্দা দেবাশীষ বলেন, বাড়িতে যাতায়াতের সড়কে ২০ দিন ধরে বন্যার পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। এ অবস্থায় গত রাতের বৃষ্টিতে ফের পানি বেড়েছে। বন্যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।  
 
দক্ষিণ সুরমার দাউদপুরের আব্দুল মালিক বলেন, বন্যার পানি ঘর থেকে নেমেছে। কিছুটা কমলেও বৃষ্টি হলে ফের বেড়ে যায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি ওঠা-নামার মধ্য রয়েছে।
 
একইভাবে মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে ভারী বর্ষণে পানি বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সুরমা, কুশিয়ারার পানি। তবে এ কয়দিন ধরে নদীর পানি ওঠানামা করছে বলেও জানা গেছে।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় নদীর পানি দ্রুত নেমে গেলেও তৃতীয় দফা বন্যায় পানি নামছে না। নদীর পানিও খুব ধীর গতিতে নামছে। প্লাবিত এলাকাগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দিয়েছে।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বুধবার সকাল ৬টায় ১৩ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার, সকাল ৯ টায় ১৩ দশমিক ৯, দুপুরে এক সেন্টিমিটার এবং বিকেলে আরও ১ সেন্টিমিটার কমেছে। সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।  

অমলশীদে কুশিয়ারার পানি সকাল ৬টায় ১৬ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টা ও দুপুর ১২টায় ২ সেন্টিমিটার কমে ১৬ দশমিক ১৬ দশমিক ৬ এবং বিকাল ৩টায় আরও ২ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি এদিন সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ ছিল ১৩ দশমিক ১৮, সকাল ৯টায়, দুপুর ১২টায়, বিকাল ৩টায় ধারাবাহিক ছিল ১৩.১৭ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ২ সেন্টিমিটার কমে ১৩ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার দিয়ে অর্থাৎ বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জে সুরমার পানি এখনো বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীর পানি ১০ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আরো ২ সেন্টিমিটার বেড়ে ১০ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান ছিল।
 
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতর সিলেটের তথ্যমতে, মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার (০৬ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৯১ দশমিক ২ মিলিমিটার ভারী বর্ষণ হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আরও ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামি ২৪ ঘণ্টার পূর্বাবাসে বলা হয়েছে সিলেটের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি/বজ্রসহ ভারী বর্ষণ হতে পারে।  
 
বানভাসি লোকজন বলেন, দুই দফা বন্যার পর বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক দেখা দেয়। এমনকি নগরের লোকজনও সেই আতঙ্কে ভোগছেন। কেননা, অতিবৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়। এক কথায় শহর থেকে গ্রাম কেউ নিরাপদ নয়।
 
গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। ১৬ জুন থেকে সিলেটে শতাব্দির ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে নগরীসহ সিলেটের ৫টি পৌরসভা ১৩টি ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে প্রায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন। বন্যায় লাখের উপর ঘরবাড়ি ও ৬ লাখের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যার পানি ডুবে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ যাবত সিলেট বিভাগে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এনইউ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।