টাঙ্গাইল: তিন বার কাজের মেয়াদ বাড়ানো এবং চারজন সাব ঠিকাদারদের সহযোগিতা নেওয়ার পরও ছয় বছরে আবদুল মোমেন লিমিটেড টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই সার্ভিস লেন ও উড়াল সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে পুরো মহাসড়কে চার লেনের সুবিধা পেলেও গোড়াই অংশে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
এদিকে গোড়াই উড়াল সেতু নির্মাণে আবদুল মোমেন লিমিটেড সহযোগী হিসেবে আরও চারজন সাব ঠিকাদার নিয়োগ দেন। এরা হচ্ছেন- নীলফামারীর আশরাফুল ইসলাম, নওগাঁর মো. কালাম, রংপুরের সোলায়মান মিয়া এবং গাজীপুরের জয়েন ভ্যান্সার রাজিব-কার্তিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারজন সাব ঠিকাদারের শ্রমিকরা কেউ ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধছেন। কেউ আবার উড়াল সেতুর মাঝখানে ঢালাইয়ের কাজ করছেন। এখনো শেষ হয়নি উড়াল সেতুর মাঝের ও দুই পাশের গাইড ওয়াল।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কটি চার লেনে নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকারও বেশি।
এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চার প্যাকেজে কাজ হয়েছে।
এর মধ্যে প্যাকেজ-৪ নম্বরের আওতায় পড়েছে এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের ১০ কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএলের এ অংশের নির্মাণকাজ করেছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড।
কাজের চুক্তি মূল্য ৩৫৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজে টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার নির্মাণ করছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
তৃতীয় প্যাকেজে দুল্লামারী রোড থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান ও বাংলাদেশের মীর আখতার।
এই চার লেন মহাসড়কের কাজ শেষ হলেও মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় উড়াল সেতু ও সার্ভিসের লেনের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তিন ধাপে মেয়াদ বাড়ানো হলেও চারজন সাব ঠিকাদারের সহযোগিতা নিয়েও এ দুটি কাছ এখনো শেষ করতে পারেনি আবদুল মোমেন লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ৬১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন উড়াল সেতুটির কারণে এখনো পুরোপুরি চার লেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা। ফলে প্রতিদিনই ওই স্থানে ৬/৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাব ঠিকাদারদের কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাদের অনেকের বেতন বা বিল এখনো পরিশোধ করা হয়নি। কারো কারো দুই থেকে তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তারা জানান, মূল ঠিকাদার সাব ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করতে গরিমসি করার কারণে এমনটা হয়েছে বলে সাব ঠিকাদার তাদের জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবদুল মোমেন লিমিটেডের নিয়োগপ্রাপ্ত সাইটে দায়িত্বরত এক কর্মচারী জানান, সাব ঠিকাদারদের নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে কাজটা দ্রুতই শেষ হয়ে যেত। ঠিকমত বিল পরিশোধ না করার কারণে কাজটি শেষ করতে পারছে না সাব ঠিকাদার।
এ বিষয়ে আর কে কনস্ট্রাকশনের রাজিব জানান, আবদুল মোমেন লিমিটেডের কাছ থেকে তিনিসহ চারজন কাজটি সাব নিয়েছেন। কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে আবদুল মোমেন লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, আবদুল মোমেন লিমিটেড নিজেরাই উড়াল সেতুর কাজ করছেন। এতে কোনো সাব ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাসেক-১ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর কাজ বন্ধ ছিল। একদিকে নির্মাণ সামগ্রীর মূল ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা ও গ্যাস পাইপ সরাতে অনেক সময় লেগেছে। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
আরএ