ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রেল লাইনের পতিত জমিতে আনারস চাষ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২২
রেল লাইনের পতিত জমিতে আনারস চাষ

লালমনিরহাট: রেল লাইনের পতিত জমিতে আনারস চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কৃষক আব্দুল কাদের।

কৃষক আব্দুল কাদের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের লাল ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা।

আব্দুল কাদের জানান, ভারতের শিলিগুড়ির আনারকলি জাতের আনারস নিয়ে এক বন্ধু বেড়াতে আসেন তার বাড়িতে। সুমিষ্ট সেই আনারস খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তার জাত বাড়ানোর স্বপ্নে বাড়িতে রোপণ করেন আনারসের কাণ্ড। সেই গাছ বড় হয়ে ফল দিলে অবাক হন তিনি। এর পর বাড়াতেই থাকেন আনারসের চারা। সেই থেকে বাড়িতেই আনারস চাষ শুরু করেন কৃষক আব্দুল কাদের। স্বপ্ন দেখেন বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষাবাদের। কিন্তু উপযোগী জমি ছিল না।

পানি জমে না এমন ঢালু ও উঁচু জমি আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। লালমনিরহাটের জমি সব সমতল হওয়ায় শখ থাকলেও আনারস চাষে লাভের সুযোগ খুবই কম। কিন্তু কৃষক আব্দুল কাদের লালমনিরহাটেই আনারস চাষের স্বপ্ন বুনেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণে বাড়ির পাশে লালমনিরহাট বুড়িমারী রেল লাইনের পতিত ঢালু জমিতে ২০০৮ সালে আনারস চাষের উদ্যোগ নেন। বাড়িতে লাগানো আনারকলি জাতের আনারসের চারা পরীক্ষামূলক রেল লাইনের দু'ধারে রোপণ করেন। বেশ সুফল পেয়ে প্রতিবছর রেল লাইনের ধারেই বাড়তে থাকে আনারসের বাগান।

আনারকলি জাতের এ আনারস ভারতের শিলিগুড়িতে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের হলেও আব্দুল কাদেরের বাগানে ফলেছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন পর্যন্ত। তবে ওজন যাই হোক স্বাদে কমতি নেই। সুস্বাদু আনারকলি জাতের এ আনারসের চাহিদা প্রচুর থাকায় বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। ক্ষেত থেকে নগদ ও পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা প্রতি পিস। এ বছর তিনি প্রায় ৫ হাজার পিস আনারস বিক্রি করেছেন। এছাড়াও বন্ধু, বান্ধব, আত্নীয়, স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলি করেছেন।

কৃষক আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, আনারস এমন একটা ফসল যার চারা একবার লাগালেই চলে। প্রয়োজন শুধু পরিচর্যা করা। ফল বড় হলে তা সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে জাগ (ঝাউ জঙ্গল দিয়ে ঢেকে রাখা) দিয়ে রাখতে হয়। পরে পাকলেই তা বিক্রি করতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। এজন্য রেল লাইনের পতিত জমিতে চাষাবাদ করেছি। আনারস চাষ রেল লাইনের কোনো ক্ষতি করে না। বরংচ মাটির ক্ষয়রোধ করে। রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত পুরো রেললাইনে আনারসের বাগান করতে চাই। তাতে একদিকে দেশের আনারসের চাহিদা মিটবে পাশাপাশি রেল লাইনের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে রেল লাইনের পতিত জমির আনারস বাগান।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। তাই রেল লাইনের পতিত জমি আমি কাজে লাগিয়েছি, আনারস চাষে। সারাদেশের রেল লাইনের পাশে এভাবে আনারস চাষ করা সম্ভব বলে যোগ করেন কৃষক আব্দুল কাদের।

কৃষক আব্দুল কাদেরের প্রতিবেশী উপ সহকারী কৃষি অফিসার বীরেন্দ্রনাথ রায় বাংলানিউজকে বলেন, কৃষক আব্দুল কাদের একজন সফল কৃষক। তার অনেক বাগান রয়েছে। নিজ উদ্যোগে আনারস বাগান করলেও মাঝে মধ্যে কৃষিবিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। আনারসে রোগ বালাই কম এবং উৎপাদন খরচও অনেক কম। কম খরচে অধিক লাভবান হতে ঢালু জমিতে আনারস চাষের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।