ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙনকবলিত বাঁধ সংস্কারে অগ্রগতি নেই:

শ্যামনগরে প্লাবিত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২২
শ্যামনগরে প্লাবিত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট

সাতক্ষীরা: তৃতীয় দিনের মতো ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানির প্রবেশ অব্যাহত থাকায় শ্যামনগরে আরও ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবারের (১৫ জুলাই) জোয়ারের পানিতে ৯টি গ্রাম ডুবে যাওয়ার পর নতুন আরও ৫ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সমগ্র এলাকা সাগরের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরের জোয়ারের পর এসব এলাকার নতুন নতুন চিংড়ি ঘের, কাঁকড়ার প্রজেক্ট, মিষ্টি পানির পুকুরসহ অসংখ্য কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কাঁচা ঘর-বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি সারা  এলাকায় খাবার পানির সংকট তীব্র হয়েছে।

এদিকে নদীতে জোয়ারের চাপ বেশি থাকায় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভাঙন কবলিত অংশের বাঁধ মেরামতের কাজ তৃতীয় দিনেও শুরু করা যায়নি।

সরেজমিনে বুড়িগোয়ালীনি ও আটুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, শনিবার দুপুরে জোয়ারের পানি প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকছে। শুক্রবারের জোয়ার থেকে রক্ষা পেলেও শনিবার দুপুরের জোয়ারে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়ক প্রায় দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসময় জোয়ারের পানি কলবাড়ি, মাদিয়ার অবশিষ্ট অংশ, বুড়িগোয়ালীনি, বিলআটি ও আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রাম প্লাবিত করার পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের ছোট বড় সংযোগ সড়ক তলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয় ও পানিসহ খাদ্যের খোঁজে বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাইরে আসা পানিবন্দি শত শত নারী-পুরুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়।

বুড়িগোয়ালীনি গ্রামের রঘুদাস মাঝি জানান, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত তাদের গ্রামে পানি ঢোকেনি। তবে শনিবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে বুড়িগোয়ালীনিসহ আশপাশের আরও ৪ গ্রামে পানি ঢুকেছে। সারা এলাকা লবণ পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির প্রচণ্ড সংকট তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পানিবন্দি কলবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙনের তৃতীয় দিনে এসে তাদের এলাকার যাবতীয় কাঁকড়ার প্রজেক্ট ও পোল্ট্রি মুরগির খামার ভেসে গেছে। এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় পুরো এলাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বাঁধের ভাঙন কবলিত অংশ মেরামতে দেরি হলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে।

টুঙ্গিপাড়া গ্রামের প্রভাষক পরীক্ষিত মন্ডল জানান, তিনদিন ধরে তারা পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। বসতঘরের মধ্যে হাঁটু পানি থাকায় নানাবিধ অসুবিধা সত্ত্বেও যাওয়ার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে রাতে রাস্তা আর বেড়িবাঁধের ওপর কাটিয়ে দিচ্ছেন। ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত না করা পর্যন্ত তাদের এ দুরাবস্থা কাটবে না।

বৃষ্টির পানি ধরে তৃষ্ণা মেটানোর দাবি করে মাদিয়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, প্রতি বছর একাধিক বার তারা ভাঙনের মুখে পড়েন। গত তিন বছরের ভাঙনে সর্বস্ব খোয়ানোর পর এবারের ভাঙনে তাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই।

পোষা গরু-ছাগলগুলোকে মুন্সিগঞ্জ ও নওয়াবেঁকীতে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, খাবার পানি, আর শুকনা খাবারের জন্য দূর-দূরান্তে লোকজন পাঠিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

এদিকে, তিনদিন পার হলেও ভাঙন কবলিত অংশে রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও নদীতে জোয়ারের তীব্রতায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটার পানি ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে ওঠানামা করায় সেখানে ভাঙন প্রায় ৪শ ফুট পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান শ্যামনগর অঞ্চলের সেকশন অফিসার মাসুদ রানা।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন অংশে উপকূল রক্ষা বাঁধ নদীতে বিলীন হয়। এসময় রাতের জোয়ারের তদসংলগ্ন ২টি গ্রামে পানি ঢোকে। তবে শুক্রবার সারাদিনে ভাঙন কবলিত অংশে রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা সফল না হওয়ায় দুপুরের জোয়ারে উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ও আটুলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও পূর্ব দূর্গাবাটি, পোড়াকাটলা, ভামিয়াসহ ৯টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, ১৬ জুলাই, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।