ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর আগামী মাসে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির শপথ

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১০
প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর আগামী মাসে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির শপথ

ঢাকা: এখন পর্যন্ত শপথ নিতে না পারা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও মোহাম্মদ খসরুজ্জামান আগামী মাসেই শপথ নিতে পারেন।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম অবসরে যাওয়ার পর এ দুই বিচারপতির শপথ হতে পারে বলে সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।



প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শেষ অফিস করে ৩০ তারিখ থেকে অবসরে যাবেন।  

গত ১৩ এপ্রিল এ দুই বিচারপতিসহ মে মোট ১৭ বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জনকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ার তাদের রেখে বাকি ১৫ জন শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

গত ১৮ এপ্রিল সকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আয়োজিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১৫ বিচারপতিকে আলাদা আলাদাভাবে শপথবাক্য পাঠ করান। তবে ওই শপথ অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের বিচারপতিরা উপস্থিত থাকলেও আপিল  বিভাগের কোন বিচারপতি যোগ দেননি।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলানিউজকে জানান, অতীতে নবনিযুক্ত বিচারপতিদের শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের যোগ না দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দাবির মুখে নবনিযুক্ত বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও মোহাম্মদ খসরুজ্জামানকে শপথ করাননি প্রধান বিচারপতি। শপথ নেওয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। অপরদিকে দুই বিচাপতিকে শপথ না করানোয় প্রধান বিচারপতিকে তখন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। সে সময়ে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটা আইনের শাসন ও সংবিধানের বিজয়। ’
 
অন্যদিকে, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ প্রসঙ্গে একাধিকবার বলেছেন, ‘দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। ’

একইভাবে আইনমন্ত্রী বারবার আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ পড়াবেন। আবার আইন, বিচার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এক সেমিনারে বলেছিলেন, ‘দুই বিচারপতিকে শপথ না পড়িয়ে প্রধান বিচারপতি তার নিজের শপথ লঙ্ঘন করেছেন। ’  অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘আশা করছি বাকী দুই বিচারপতিও শপথ নেবেন। ’

অপরদিকে আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে শপথ নেয়া বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

নবনিযুক্ত বিচারপতিরা যোগ দেওয়ার পর হাইকোর্টের বেঞ্চ পূর্নগঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। শপথের পরই ১৫ বিচারপতির নিয়োগ কার্যকর হয়।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ১৭ বিচারপতি নিয়োগ দেন। পরে রুহুল কুদ্দুস ও মোহাম্মদ খসরুজ্জামানের ব্যাপারে আপত্তি জানায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। ১৫ এপ্রিল সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের সঙ্গে দেখা করে দুই জনকে শপথ না পড়ানোর আহ্বান জানান।

মো. খসরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে রুহুল কুদ্দুস একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।   গত এপ্রিল মাসে ওই মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়।

বিচারপতিদের শপথ অনুষ্ঠানের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেছিলেন, ‘সংবাদ মাধ্যম দুই বিচারকের কর্মকাণ্ড সামনে নিয়ে এসেছে। এজন্য আমরা মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। মিডিয়ার বক্তব্যই আমরা প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছিলাম। তিনি অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন বিচারক। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বিচারককে শপথ না দেয়ায় আমরা প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানাই। তিনি আইনজীবী সমিতির অভিমতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া নবনিযুক্ত দুই বিচারপতির নিয়োগ বাতিলের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তারপরও যদি দুই জনের নিয়োগ বাতিল করা না হয় তবে আইনজীবীরা তা মেনে নেবে না। আইনজীবী সমিতি এর বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলবে।

অন্যদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই বিচারপতির শপথ না হওয়া প্রসঙ্গে তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেছিলেন, ‘রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি একটি হত্যা মামলার আসামী। ১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিবিরকর্মী হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিলো। আমাদের এখানে রাজনৈতিক ঘটনায় অনেক সময়ই ছাত্রদের জড়িয়ে মামলা দায়ের করা হয়। রুহুল কুদ্দুসকে আমরা আইনজীবী হিসাবে দেখেছি। তিনি সৎ ও দক্ষ। ’

খসরুজ্জামান প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুর করেছেন বলে মিডিয়ায় যে ছবি ছাপানো হচ্ছে তা অসত্য। প্রধান বিচারপতির এজলাসে কোন থাই দরজা নেই। ’

বাংলাদেশ সময় ১০২০ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।