রাজশাহী: আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে নতুন ঘরের চাবি ও দলিল হাতে পেয়ে রাজধানীর চারঘাট উপজেলার হলদিগাছী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছপুরা আজ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখ ভিজে ওঠে।
ঘর পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবন্ধী সুবিধাভোগী আব্দুল মালেকও। তিনি বলেন, আমি প্রতিবন্ধী তাই আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের সবাই আমাকে অবহেলার চোখেই দেখে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মা আমার কষ্টের কথা ভেবেছেন। তিনি বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দিয়েছেন। ফলে আমার মর্যাদা আবার বাড়লো। আমি মায়ের জন্য দোয়া করি।
চারঘাট উপজেলার হলদিগাছী আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী লিটন আলী ও তার স্ত্রী রেনু বেগম বলেন, জমিসহ ঘর পেয়ে তারা অনেক আনন্দিত। রেনু বেগম বলেন, আমার স্বামী ভ্যানচালক। থাকার জায়গা ছিল না। তাই দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে বস্তিতে থাকতাম। হালকা ঝড়-বৃষ্টির হলেই পানি পরতো। নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে দিন যাপনের মধ্যে আজকে এ ঘর পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। এখন আর ঝড়-বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হবে না- ভেবে খুবই ভালো লাগছে।
সুবিধাভোগী লিটন আলী বলেন, আমাদের হলদিগাছী আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুটি সুন্দর পুকুর ও বাড়ির পাশে ফাঁকা জমি আছে। সেখানে মাছ ও সবজি চাষ করবো। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। আর না খেয়ে থাকতে হবে না। এখন আমি সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবো এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের জন্য দোয়া করবো।
আজ টুকরো টুকরো আনন্দধারাগুলো এভাবেই ঝর্ণার মতো বয়েছে রাজশাহীতে। ভূমি ও গৃহহরা ১৭৫ পরিবারের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজশাহী জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৭৫টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ সকালে চারঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ উপজেলার উপকারভোগী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে জমির দলিলসহ গৃহের প্রতীকী চাবি তুলে দেন। তাই এদের মতো সবারই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল অভিন্ন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, সারাদেশে ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প’র মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দিয়েছেন- ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ’ এরই অংশ হিসেবে রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট ও বাঘা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করা হলো। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্য উপজেলাকেও ভূমিহীন ও গৃহহীন উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির মূল দর্শনই ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা সে লক্ষ্য পূরণে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাংলাদেশের দারিদ্রতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এ নতুন পদ্ধতি ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০৪১ সালের আগেই ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
এসএস/আরবি